নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। বাজারে উঠেছে নানা ধরনের সবজি। তবে দামে স্বস্তির ছোঁয়া নেই। নিত্যপণ্যের দামে হাঁফ ছাড়ছেন ক্রেতারা। আশা ছিল-শীত এলে সবজির দাম কমবে, কিন্তু বাস্তবতায় মিলছে না। দামের চাপে সাধারণ মানুষের রান্নাঘর এখনো আগের মতোই সংকটে।
গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে বেগুন ৮০ টাকা করে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া ৪০ টাকার মুলা ৩০ টাকা, ৫০ টাকার কুমড়া ৪০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৩০ টাকায় এবং ৮০ টাকার গাজর ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে শীতকালীন অন্যান্য সবজির দাম আগের মতোই রয়েছে। প্রতি কেজি ফুলকপি এ সপ্তাহেও বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এছাড়া বাঁধাকপি ৪০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, শিম ৬০ টাকা ও কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একই সঙ্গে বাজারে নতুন আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে, কোথাও কোথাও অবশ্য ১৩০ টাকাতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, সবজির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ কম, তাই দাম আগের মতোই।
খিলগাঁও বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘শীত আসার সঙ্গে সবজির চাহিদাও বাড়ছে। তবে সরবরাহ কিছুটা কম। আশা করছি সামনে দাম কমবে।’
রামপুরা বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘শীত চলে এলেও অনেক সবজির দাম এখনো কমেনি। অথচ সব সময় দেখেছি যে শীতে সবজির দাম কম থাকে।’
মুগদা কাঁচাবাজারে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, ‘শীত এসেছে, কিন্তু অনেক সবজির দাম কমছে না। ফলে চাইলেও মনমতো বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এছাড়া বেশ কয়েক মাস নিম্নমুখী ডিম ও মুরগির বাজার। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা দামে।
বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫০-২৭০ টাকায়, লেয়ার ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোলট্রি মুরগির বিক্রেতারা বলছেন, শীতে সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলে মুরগি ও ডিমের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। এ কারণেই দাম কমেছে।
গত রোববার প্রতি লিটার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ৬ ও ৭ টাকা। এছাড়া প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ১৬ টাকা ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় ৩৩ টাকা। এতে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে হয় ১৯৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৮৯ টাকা।
পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯২২ টাকা থেকে বেড়ে ৯৫৫ টাকা হয়েছে। এছাড়া এক লিটার খোলা সয়াবিনের দাম এখন ১৭৬ টাকা এবং প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৬ টাকায়। তবে বাজারে অন্য মুদি পণ্যগুলোর দাম অনেকটাই অপরিবর্তিত দেখা গেছে।
অন্যদিকে মাছের দামে খুব বিশেষ কোনো পরিবর্তন নেই, এর দাম সব সময় বাড়তিই থেকে যায়। পাইকারি বাজারে মাছের দামে কিছুটা এদিক-সেদিক হলেও খুচরা বাজারে সে প্রভাব এসে পৌঁছায় না। ফলে বাড়তি দামেই মাছ কিনতে হয়, অভিযোগ ক্রেতাদের। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাছের দামের এমন চিত্রই দেখা গেছে। দু-এক রকমের মাছ ছাড়া বেশির ভাগ মাছের দামই বাড়তি দেখা গেছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ (মাঝারি) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়, কই মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, প্রতি কেজি চাষের শিং ৪৫০ টাকা, প্রতি কেজি তেলাপিয়া আকারভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, বড় চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙাস প্রতি কেজি ১৮০ টাকা, শোল প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, টেংড়া প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, মলা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই চড়া দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের বাজেটের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।
মাছের দামের বিষয়ে মুগদা বাজারের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, বর্তমানে কিছু কিছু মাছের দাম কমলেও, বেশির ভাগ মাছের দাম আগের মতোই রয়ে গেছে। মূলত মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি হওয়ার পর থেকে বাজারে মাছের দাম বেড়েছে। এরপর থেকে মাছের দাম সেভাবে আর কমেনি। মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় মাছ আসে, সেই মাছের পরিবহন খরচ, অন্যান্য খরচ সব মিলিয়ে মাছ চাষিরা আড়তে বিক্রি করে যায়। এরপর কয় হাত ঘুরে মাছ সাধারণ ক্রেতাদের কাছে আসে, সবকিছু মিলিয়ে মাছের দাম বাড়তি যায় বাজারে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মৌসুমি সবজি উঠলেও সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা এবং নির্বিঘ্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হলে এই উচ্চমূল্যের চাপ ভোক্তাদের বয়ে বেড়াতেই হবে।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post