অর্থনৈতিক খাতে একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের সংবাদটি নতুন আশার আলো জ্বেলেছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নানা কর্মপ্রক্রিয়া শেষে সফলতার মুখ দেখল আর্থিক খাত।
প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে গঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বোর্ডসভায় নতুন ব্যাংকটির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।
বিগত সরকারের পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ দিন থেকে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানামুখী বিপর্যয় চলছিল। বিশেষ করে ব্যাংকগুলোয় এ অবস্থা ছিল চরমে। বিগত সরকারের আমলে অনেক পুঞ্জীভূত অনিয়মই ছিল এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে অনেকেই মনে করেন।
সরকার পরিবর্তনের পর আস্তে আস্তে ব্যাংক খাতে এই আঁধার আরও ঘনীভূত হয়। সরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও নেমে আসে অর্থ সংকটের প্রভাব। নিত্যদিন গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো অর্থ সরবরাহে হিমশিম খেতে থাকে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলো বেশি সংকটের মুখে পড়ে। গ্রাহকরা নানা গুজবে কান দিয়ে বুকে হতাশা ধারণ করে ভিড় জমাতেন ব্যাংকের শাখাগুলোর সামনে। এমনি চিত্র ব্যাংকগুলোয় নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘদিনের তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় সরকার এগুলো একীভূত করার চিন্তাভাবনা করছিল। বিভিন্ন আর্থিক তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ শেষে হাজারো আলোচনার মাঝে সেই সিদ্ধান্ত আলোর মুখ দেখল।
আরেকটি তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই নতুন ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করবে। একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
অনুমোদনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। মতিঝিল অফিসে নতুন ব্যাংকের নির্ধারিত হিসাব খোলার কাজ ইতোমধ্যে চলছে। রাজধানীর মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, নতুন ব্যাংকটির মোট পেইড-আপ ক্যাপিটাল হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকা আসছে আমানতকারীদের শেয়ার থেকে। প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা।
আশার কথা হলো, এই একীভূত প্রক্রিয়ার ফলে এবং নতুন মূলধন প্রদানের পর্ব শেষ হলে ব্যাংক খাতের বিপর্যয় অনেকটাই কেটে যাবে। কমে যাবে গ্রাহকের ভোগান্তি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, একীভূত এই নতুন ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আমরা মনে করি, বিলম্বে হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত সাধারণ ব্যাংক-গ্রাহকের মাঝে স্বস্তি নিয়ে আসবে। আবার প্রাণসঞ্চার হবে ব্যাংকিং কার্যক্রমে। আবার শুরু হবে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রত্যাশিত নতুন গতি। কেটে যাবে গ্রাহকদের মনের দুশ্চিন্তার আঁধার। আমাদের প্রত্যাশা—শুভ হোক একীভূত পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের নতুন পথচলা।
প্রিন্ট করুন







Discussion about this post