জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসেবে সব ধরনের যানবাহন কেনা এবং সরকারি অর্থে বিদেশভ্রমণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিস্থাপন করা যাবে। একই সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ থাকবে।
গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অনুবিভাগ-১ থেকে অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়, সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ৪১১২১০১-মোটরযান, ৪১১২১০২-জলযান, ৪১১২১০৩-আকাশযান খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি অর্থে সব ধরনের বিদেশভ্রমণ, সেমিনার, কর্মশালা ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ থাকবে। সেই ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, সেটি অনুসরণ করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে রাখতে হবে। কোনোভাবেই প্রক্কলিত বরাদ্দের অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রয়োজনে বাজেটের বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে, তবে তা অবশ্যই অনুমোদিত সীমার মধ্যে করতে হবে।
এ ছাড়া পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় করা যাবে না। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ধীরগতির প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া যাবে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, পরিবেশ ও জলবায়ু, বিদ্যুৎ উৎপাদন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন-সম্পর্কিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ অগ্রাধিকার পাবে।
এ ছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের সময় প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া অগ্রাধিকার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজন হলে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে বলা হয়েছে। বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন-সংক্রান্ত প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান চুক্তি সম্পাদিত হয়েছেÑএমন প্রকল্পও সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
পরিপত্রের আরও বলা হয়, পরিচালন ব্যয়ের সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরির ক্ষেত্রে গত দুই অর্থবছর এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের ব্যয় ও রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনায় রাখতে হবে। বেতন-ভাতা খাতে প্রাক্কলন প্রস্তুত করতে হবে প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে।
অর্থ বিভাগের অনুমোদনে কোনো খাতে বরাদ্দ পুনঃউপযোজন করা হলে সংশোধিত বাজেটে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে থাকলে সেটিও সংশোধিত বাজেটে দেখাতে হবে।
এ ছাড়া অননুমোদিত কোনো স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না বলেও উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে। একই উদ্দেশ্য বা প্রকৃতির ছোট প্রকল্পগুলোকে একত্রে গুচ্ছ প্রকল্প হিসেবে প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে তাতে।
অর্থ বিভাগের পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীয় মুদ্রার বরাদ্দ নিশ্চিত করার পরই নতুন প্রকল্পের প্রস্তাব করা যাবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা এবং বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকারের এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। বিশেষ করে বিদেশভ্রমণ ও যানবাহন কেনায় নিষেধাজ্ঞা রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে শৃঙ্খলা আনবে বলে মনে করছেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই কৃচ্ছ্রনীতি অনুসরণ করলে অগ্রাধিকার খাত যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশে অর্থ বরাদ্দ আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post