নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপ উদ্যোগগুলোকে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির অর্থায়ন গতিশীল করার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্টার্ট-আপ অর্থায়ন সংক্রান্ত নীতিমালা আরও সময়োপযোগী করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে একটি স্টার্ট-আপ (নতুন উদ্যোক্তা) প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ আট কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। আগে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা ঋণ বা বিনিয়োগ দিতে পারত ব্যাংকগুলো। মাত্র চার শতাংশ সুদে এই ঋণ বা বিনিয়োগ পাবে স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান।
নীতিমালায় সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময়পূর্বক তাদের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টার্ট-আপ খাতে অর্থায়ন-সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন প্রণীত এ মাস্টার সার্কুলারে স্টার্ট-আপ খাতে অর্থায়ন সহজীকরণ এবং ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানির অর্থায়ন গতিশীল করার লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা পরিবর্ধন করা হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় স্টার্ট-আপ উদ্যোগের একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে; যা আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুসংহত বলে মনে করছে কেন্দ্রেীয় ব্যাংক। স্টার্ট-আপ উদ্যোগে অর্থায়ন প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে উদ্যোক্তার বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর হতে হবে এবং এক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা রাখা হয়নি। স্টার্ট-আপ উদ্যোগ নিয়ে কার্যরত বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান এ অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্য হবে। তবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানের কার্যকাল নিবন্ধনের সময় হতে অনধিক ১২ বছরের মধ্যে থাকতে হবে।
স্টার্ট-আপ উদ্যোগে প্রদত্ত অর্থায়ন পদ্ধতি ও অর্থায়ন সীমা দুটোতেই ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে নতুন নীতিমালায়। আগে তফসিলি ব্যাংকগুলোর স্টার্ট-আপ ফান্ড হতে শুধু ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের সুযোগ ছিল। নতুন প্রণীত মাস্টার সার্কুলার মোতাবেক স্টার্ট-আপ উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ/বিনিয়োগের পাশাপাশি ইকুইটি সুবিধা প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।
প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের গঠিত নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোগগুলোকে শুধু ইকুইটি বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা যাবে। স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইকুইটি হিসেবে আর্থিক বিনিয়োগ সহজতর করার প্রয়াসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উক্ত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানে তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক তাদের স্টার্ট-আপ ফান্ডে রক্ষিত সমুদয় অর্থ ইকুইটি হিসেবে বিনিয়োগ হবে; যা ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণীতে ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে বা প্রদর্শিত হবে। উক্ত কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদন করবে। আলোচ্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠন, কোম্পানি পরিচালনা পদ্ধতি প্রভৃতি সংক্রান্ত বিশদ নির্দেশনা পরবর্তীতে পৃথক সার্কুলার/গাইডলাইন্সের মাধ্যমে প্রদান করা হবে।
স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ/বিনিয়োগ প্রদান করতে ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব ঋণ/বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ব্যবহার করতে হবে। ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোও তাদের নিজস্ব ঋণ/বিনিয়োগযোগ্য তহবিল হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ/বিনিয়োগ প্রদান করতে পারবে।
ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বিতরণকৃত ঋণ/বিনিয়োগের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল হতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
এই সার্কুলার জারির পর হতে ব্যাংকের নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ থেকে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে নতুন করে কোনো ঋণ/বিনিয়োগ বিতরণ করা যাবে না। তবে ইতোমধ্যে মঞ্জুরীকৃত ঋণ/বিনিয়োগসমূহের অর্থ ছাড় করা যাবে।
স্টার্ট-আপ খাতে উদ্যোক্তাদের অনুকূলে পুনঃঅর্থায়ন ও ইকুইটি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে উদ্যোগগুলোর কার্যকালের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রেণিবিন্যাসিত করা হয়েছে এবং পর্যায়ভিত্তিক ঋণসীমা ২ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ১ কোটি টাকা ছিল।
গ্রাহক পর্যায়ে মেয়াদি ও চলতি মূলধন ঋণ/বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদ/মুনাফার হার হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ, যা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আরোপযোগ্য হবে।
সম্ভাবনা, ঝুঁকি, সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ/বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ঋণঝুঁকিবিষয়ক ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের জারিকৃত নির্দেশনা পরিপালন হতে ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিসমূহ তাদের নিজস্ব ঋণ/বিনিয়োগযোগ্য তহবিল হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ/বিনিয়োগ গ্রাহক পর্যায়ে ছাড় করার ক্ষেত্রে অশ্রেণিকৃত ঋণ/বিনিয়োগের বিপরীতে ০.৫০ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, নতুন জারিকৃত এ সার্কুলারে যে সকল পরিমার্জন ও পরিবর্ধন আনা হয়েছে তা সম্ভাবনাময় এ খাতের অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তির পথ সহজ করার পাশাপাশি এ খাতের কার্যকর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।

Discussion about this post