স্বরূপ ভট্টাচার্য, চট্টগ্রাম : ২৩ বস্তা নথি উদ্ধারের পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের অর্থ পাচারের এজেন্ট উৎপল পাল ও দেশের সম্পদের কেয়ার টেকার মো. আবদুল আজিজ তাদের দায়িত্ব স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। উৎপল জাভেদের বাংলাদেশ থেকে দুবাই ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারে এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে এই জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলের আদালত এদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। জবানবন্দি দেয়া দুই অভিযুক্তের মধ্যে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম এবং উৎপল পাল আরামিট পিএলসির এজিএম।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভেকেট মোকাররম হোসাইন শেয়ার বিজকে জানান, ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের ঘটনায় দুদকের মামলায় রিমান্ডে থাকা উৎপল পাল ও মো. আবদুল আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতভর কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা শিকলবাহা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রুখমিলা জামানের গাড়ির ড্রাইভার ইলিয়াসের প্রতিবেশী ওসমানের বাড়ি থেকে ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে-বেনামে আরও পাঁচ দেশে সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
দুদকের নেতৃত্বাধীন বিশেষ টাস্কফোর্স ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় সম্পদ অর্জনের রেকর্ড উদ্ধার করেছে। দুদকের ধারণা, এসব দেশে সম্পদ কেনার তথ্য এসব নথিতে রয়েছে, যা সাইফুজ্জামানের ট্যাক্স ফাইলে দেখানো হয়নি। এর আগে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সাইফুজ্জামানের ৫৮২টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকার প্রমাণ পায় দুদক।
গত ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহমানের আদালতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তারস্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য দুদকের আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর একই আদালতে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছিল।
আদালত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আব্দুল আজিজ দুদকের এজাহারভূক্ত আসামি। আর আরামিট পিএলসির উৎপল পাল নতুন মামলায় দেশে বিদেশে সাইফুজ্জামানের যত সম্পত্তি অবরুদ্ধের তালিকায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা মূল্যমানের হোটেল করেছে। জাবেদের বিদেশের সম্পদ অর্জন ও দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী উৎপল পাল। তিনি দুবাই ও দুবাই থেকে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার প্রক্রিয়া চালাতেন। দুদক টিম উৎপল পালকে অর্থ পাচারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখছে। যদিও তিনি আরামিট পিএলসির কর্মচারী, কিন্তু তিনি জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (বিদেশে সম্পদ তৈরি ও দেখাশোনার কাজ) হিসেবে কাজ করেছেন। তার কাছ থেকে জব্দ করা দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যা ফরেনসিক করার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া আবদুল আজিজ সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও আরামিট গ্রুপের অর্থ পাচারের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। জাবেদ এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক মশিউর রহমানকে। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল ২ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর নগরীর কোতোয়ালি থানায় জাবেদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সর্বশেষ গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভুয়া তথ্য দিয়ে ইউসিবি ব্যাংক থেকে প্রায় ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক।

Discussion about this post