নিজস্ব প্রতিবেদক : সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে কেউ পুঁজিবাজারে আসে না বলে মন্তব্য করেছেন এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। তিনি বলেন, আমরা আসি যখন প্রতিযোগিতা এবং পুরষ্কারের অনুপাত সঠিক থাকে। বাংলাদেশের সব ডিপোজিট বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে স্বল্পমেয়াদী। আমরা স্বল্প মেয়াদী ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ তৈরি করি। অর্থনৈতিক সিস্টেমের দুরবস্থার এটা একটা কারন। কোন কোম্পানিই স্বেচ্ছায় এই বাজারে আসছে না।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী।
কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়ার কারণ তুলে ধরে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, তালিকাভুক্ত না হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে ভ্যালুয়েশন। আমরা যারা কোম্পানি তৈরি করি, স্পন্সর করি তারা যদি সঠিক ভ্যালুয়েশন না পায় তারা আসবে না।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান যদি ২০ শতাংশ থাকে তাহলে এটা কাজ করবে। যদি ১৫ শতাংশও থাকে তাহলেও কাজ করবে। কিন্তু যদি তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান ৫ শতাংশ রাখি তাহলে কোন কোম্পানিই আসবে না। এভাবে পৃথিবীর কোথাও কোম্পানিগুলো ক্যাপিট্যাল মার্কেটে আসবে না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, একটা বড় কারন হলো, পুঁজিবাজারে আসতে ভয় আছে। আমরা মনে করি এই মার্কেটে আসলে বিএসইসি আমাদেরকে ধরবে। যাকে ইচ্ছা চিঠি দিবে। এসব ভয় আছে। আরেকটা ভয় আছে,বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের থেকে। সেটা হলো এই মার্কেটে আসলে শুধু লাভই হবে লোকসান হতে পারবে না। লোকসান হলে সমাধান চাইবো বিএসইসি’র কাছে, সরকারকে বলব কেন লোকসান হলো? নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে। ব্যবসায় তো লাভ লোকসান হয়। আমরা যদি মনে করি যে লোকসান চাই না তাহলে আমাদের পুঁজিবাজারে আসার দরকার নেই। আমরাই তো এই ঝুঁকি নিচ্ছি।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর আরও বলেন, আমাদের আরেকটা ভূল ধারণা আছে বিএসইসি সম্পর্কে যে, কোম্পানি ডিভিডেন্ট কম দিচ্ছে এটা বিএসইসিকে দেখতে হবে। কোম্পানি লভ্যাংশ শূন্য শতাংশও দিতে পারে ১ হাজার শতাংশও দিতে পারে। সেটা বিএসইসির দ্বায়িত্ব নয়। বিএসইসির কাজ হচ্ছে আমরা আইন মেনে চলি না। তার কাজ হচ্ছে আমরা কমপ্ল্যায়েন্ট আছি কিনা। হ্যাঁ বিএসইসি দেখবে লভ্যাংশ সময়মতো বিতরণ হলো কিনা বা ভোগান্তি হচ্ছে কিনা।
সকল অংশীজনের ভূমিকা স্পষ্ট করতে হবে তুলে ধরে তিনি বলেন, একেকটা অংশীজনের একেকটা কাজ। আমরা অবশ্যই এটার জন্য দায়ী থাকব। দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই এটা মেনে নিতে হবে যে এখানে লাভ লোকসান আছে। এখানে সরকারের ভূমিকার জায়গা আছে।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সারা পৃথিবীতে এটা আছে। ডিলিস্টিং এবং শেয়ার বাই ব্যাক করার সুযোগ দিতে হবে। ফান্ড রাইজিং প্রসেস বাংলাদেশে দেড় থেকে দুই বছর লাগে। ভারতে যেটা তিন থেকে ছয় মাস। আমাদের যদি ফান্ড তুলতেই দুই বছর লাগে তাহলে ব্যাংক থেকেই তো সহজে ঋণ নেওয়া যায়। আমাদের তো এতো সময় নেই। ভারত এবং শ্রীলংকায় যদি তিন থেকে ছয় মাস লাগে তাহলে বাংলাদেশে ছয় মাসের বেশি নিতে পারেন না।

Discussion about this post