বয়স্ক ও বিধবা ভাতার মতো বিদ্যমান বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দেয়া ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার ভাতা দ্বিগুণ করার সুপারিশ উঠে এসেছে সদ্যসমাপ্ত সামাজিক সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন থেকে। পাশাপাশি শহরের ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যের জন্য নতুন কর্মসূচি গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের পথশিশুদের জন্য আলাদা শুমারির মাধ্যমে একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রোটেকশন, ২০২৫’ বা সামাজিক সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেল সম্মেলনের সমাপনী দিনে উঠে আসা পরামর্শগুলো আগামী বছরে তৈরি হতে যাওয়া নতুন সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রে যুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়। ফলে আশা করা যায়, প্রকৃত লক্ষ্যভোগীরাই উপকৃত হবে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ভাতাভোগীর অধিকাংশই ‘বয়স্ক ভাতা’, ‘বিধবা ভাতা’ ও ‘প্রতিবন্ধী ভাতা’। এ ছাড়া অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ‘চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’। এ কর্মসূচির আওতায় চা-শ্রমিক পরিবারপ্রতি বছরে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা দেয়া হয়। একটি পরিবার এক বছর সহায়তা পেলে পরের বছর অন্য পরিবার পায়। বাকি চারটি ভাতা কর্মসূচি হচ্ছে, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি। এ কর্মসূচিগুলোর ভাতা ও উপবৃত্তির অংশটুকু জিটুপি পদ্ধতিতে দেয়া হয়।
এখন মানুষ মূল্যস্ফীতির বড় ধাক্কায় পড়েছে, কেনাকাটার সক্ষমতা কমে গেছে। নতুনভাবে অনেকে দরিদ্র হচ্ছে, তাদের বেশি করে সাহায্য প্রয়োজন। তাদের ভাতার আওতাভুক্ত করা দরকার। এই মুহূর্তে অন্য খাত থেকে টাকা এনে হলেও দরিদ্র লোকজনকে সাহায্য করা উচিত। সাধারণ মানুষকে এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতামূলক বাজার এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলতে হবে। প্রকৃত অর্থেই সবার আয় বাড়তে হবে। কর্মসংস্থানের উদ্যোগ দরকার। বাংলাদেশে গ্রাম বা শহর যেখানেই হোক না কেন, কৃষক-শ্রমিক বা চাকরিজীবী যেই হোন না কেন, মুষ্টিমেয় ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া সবার জন্যই বাজারদর এখন বড় মাথাব্যথার কারণ। জীবনযাত্রার মূল্যবৃদ্ধির উত্তাপ সবখানেই। কার খরচ কতটা বেড়েছে, সেটি নিয়ে তর্ক হতে পারে; কিন্তু এর আঁচে যে সবাই পুড়ছেন, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
অর্থনীতির বিশেষ এ সময়ে মানুষকে স্বস্তি দিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের এগোনোর কথা। অবস্থার থেকে উত্তরণ ঘটাতে দায়সারা গোছের পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুফল মিলবে না।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মানুষকে কিছুটা সুবিধা দিতে জ্বালানি এবং কৃষিতে ভর্তুকি রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ বাজারে কঠোর তদারকি করে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব। মূল্যস্ফীতির চাপে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষদের বাজেটের মাধ্যমে নগদ ও খাদ্যসহায়তা দিয়ে সুরক্ষা দিতে হবে।

Discussion about this post