নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বড় পদক্ষেপ নিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ ইস্যুতে নানা অনিয়ম ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান আইএফআইসি ব্যাংকের গ্যারান্টিতে বন্ড ইস্যুর অনুমোদন নেয়। নাম দেয়া হয় ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’। তবে বন্ডটির বিপণন করা হয় ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞাপনে একে ‘সরকার অনুমোদিত বন্ড’ হিসেবেও প্রচার করা হয়, যদিও এটি ছিল একটি করপোরেট বন্ড। এভাবে ৭ হাজারেরও বেশি বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বন্ডটির প্রকৃতি আসলে ‘জিরো কুপন’ নয়, কারণ এতে মাসিক কিস্তিতে টাকা ফেরতের শর্ত রাখা হয়েছিল। অথচ প্রচলিত নিয়মে জিরো কুপন বন্ডে কোনো সুদ বা মাসিক কিস্তি থাকে না; পূর্ণ মেয়াদ শেষে বিনিয়োগকারী আসল টাকাসহ মুনাফা ফেরত পান। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করার মতো একটি কৌশল।
এছাড়া প্রকল্পের জমির পরিমাণ নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়। কোথাও ৩৭ একর, কোথাও ১১৭ একর এবং কোথাও ১১০ একর উল্লেখ করা হয়। অথচ আইএফআইসি ব্যাংক কেবল ৩৭ একর জমি বন্ধক রাখে। তদন্তে উঠে আসে, এসটিএল, বেক্সিমকো, শাইনপুকুর হোল্ডিংস ও ওকে কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে যৌথ উদ্যোগে জমি মালিকানা ভাগ করা হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দেয় স্বার্থের দ্বন্দ্বে। সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর সঙ্গে শ্রীপুর টাউনশিপের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকার পরও তিনি আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে বন্ড ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করেন। যা স্পষ্টত সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন এবং প্রতারণামূলক কার্যক্রম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তদন্ত শেষে বিএসইসি সালমান এফ রহমানকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালেও তিনি শুনানিতে হাজির হননি কিংবা লিখিত বক্তব্যও দেননি। অবশেষে কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ২২ ধারা অনুযায়ী তাকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করে। এই অর্থ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুকূলে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, এই আদেশ পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা যে, প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড বা ব্যক্তির প্রভাব দেখে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়; বরং প্রতিটি প্রস্তাবের প্রকৃতি ও আইনি বৈধতা ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি।

Discussion about this post