Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 6:30 am

সিরিয়ায় সংঘর্ষে নিহত ৩৫০ ছাড়াল

শেয়ার বিজ ডেস্ক : সিরিয়ার দক্ষিণের সুবাইদা প্রদেশে গত রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৩৫০ ছাড়িয়েছে। রাজধানী দামেস্ক থেকে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থার বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

এর আগে নিহতের সংখ্যা ৩০০ বলে জানানো হয়েছিল। সংস্থাটি জানিয়েছে, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দ্রুজ সম্প্রদায়ের ৭৯ সশস্ত্র ব্যক্তি এবং ৫৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২৭ জনকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদস্যরা। এ ছাড়া সংঘর্ষে সিরীয় প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৮৯ সদস্য এবং ১৮ বেদুইন যোদ্ধাও প্রাণ হারিয়েছেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, সুবাইদায় নিহতদের মধ্যে একজন মিডিয়া কর্মীও রয়েছেন, তার নাম হাসান আল-জাবি।

সিরিয়ান সাংবাদিক ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ‘অবৈধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তবে আল-জাবি কোন সংবাদমাধ্যমে কাজ করতেন, তা উল্লেখ করা হয়নি।

অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নামের এই পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি সিরিয়ার ভেতরে তাদের নিজস্ব তথ্যসূত্রের ওপর নির্ভর করে কাজ করে। এদিকে দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমান হামলায় প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, সিরিয়ায় সম্প্রতি নতুন করে সহিংসতার ঢেউ বইছে, যার পেছনে রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দ্রুজদের সঙ্গে সুন্নি বেদুইনদের সংঘর্ষ এবং ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপ। সিরিয়ার ভঙ্গুর নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও নতুন সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এই সহিংসতার পটভূমি তৈরি করেছে।

গত ১৩ জুলাই দক্ষিণ সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের এক ব্যবসায়ী অপহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইন যোদ্ধাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে ১৫ জুলাই ইসরায়েল সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে। তারা দাবি করে, দ্রুজদের রক্ষার স্বার্থে এবং যেসব সরকারপন্থি বাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের লক্ষ করে অভিযান চালানো হয়েছে।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ বলছে, ১৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে সুয়েইদা প্রদেশে অন্তত ৩৫০ জন নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলে এর আগে এপ্রিল ও মে মাসে দ্রুজ যোদ্ধা ও সিরিয়ার নতুন নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল, যাতে বহু মানুষের প্রাণ যায়।

এর আগেও মার্চ মাসে সিরিয়ার উপকূলীয় এলাকায় সংঘর্ষে আলাউই সম্প্রদায়ের শত শত সদস্য নিহত হন। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এই সম্প্রদায়েরই সদস্য ছিলেন।

বর্তমানে সিরিয়া দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্ক দখল করে নেন। নতুন সরকার গঠন করেন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সাবেক এক নেতা। তার নাম আহমেদ আল-শারা। তিনি সিরিয়ার সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সহিংসতা কমছে না।

ইসরায়েলের সামরিক হামলার কারণে এই সহিংসতা আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সিরিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা এখন বড় প্রশ্নের মুখে, যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ধর্মীয় বিভাজন এবং প্রতিবেশী দেশের হস্তক্ষেপ জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।