Print Date & Time : 16 November 2025 Sunday 5:38 am

সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

নদীমাতৃক আমাদের এই দেশ বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ। এ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা শত শত নদ-নদীর অজস্র ধারায় সমৃদ্ধ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। এ দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অনুকূল জলবায়ু ও নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা যেমন কৃষি ও জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনই করেছে মৎস্য সম্পদকে।

কৃষি খাতের অন্যতম উপখাত হিসেবে এ দেশের মৎস্য খাতে আশাতীত সাফল্য অর্জন করেছেন আমাদের মৎস্যজীবীরা। এ দেশ পৃথিবীর অন্যতম সেরা মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্লু ইকোনমির (সুনীল অর্থনীতি) দেশে দেশে বিশেষ ভূমিকা রাখছে সার্বিক উন্নতিতে। সরকারি উদ্যোগে প্রায় এক যুগ আগে গৃহীত ব্লু ইকোনমির স্বপ্ন এখন আমাদের এক অপার সম্ভাবনা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।

বেলজিয়ামের অর্থনীতিবিদ ও লেখক গুন্টার পাওলি ১৯৯৪ সালে প্রথম সুনীল অর্থনীতির ধারণা দিলেও উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংকের সম্প্রসারিত সংজ্ঞা দিয়েছে-সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ন রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নত মানের জীবন ও জীবিকা এবং কর্মসংস্থান অর্জনের লক্ষ্যে সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার হলো সুনীল অর্থনীতি।

ভূমি-বুভুক্ষু বাংলাদেশে সুনীল অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। জার্মানির হামবুর্গে ‘ইটলস (ওঞখঙঝ)’ রায়ের ফলে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের ১২ নটিক্যাল মাইল আঞ্চলিক সমুদ্রাঞ্চল এবং এ থেকে বেইসলাইন ধরে সোজা দক্ষিণে আরও ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একান্ত আর্থনৈতিক অঞ্চল লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। বলা হয়েছে, আমাদের উপকূল এক লাখ সাত হাজার বর্গ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি এক লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা পেয়েছে। আদৌ কী পরিমাণ, এটি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এর উপযোগিতা কাজে লাগাতে পারিনি আমরা।

সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত বলে এর পরিসর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গে গভীর সমুদ্র থেকে টুনাসহ বড় মাছ আহরণের মাধ্যমে আমাদের নিরঙ্কুশ অধিকার নিশ্চিত করাসহ ব্লু ইকোনমির সুফল ঘরে তোলার এখনই সময়।

এদিকে বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।

বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে। সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনতে হবে। অবশ্যই সুনীল অর্থনীতির অন্য উপাদান, যেমন-খনিজ, প্রাকৃতিক গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পর্যটন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাস্তবানুগ পদক্ষেপ নিলে তা দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।