রামিসা রহমান : ঊর্ধ্বমুখে ছুটছে পেঁয়াজের বাজার। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। প্রতি ডজন ডিমের দাম এখন ১৫০ টাকায়। এমনিতেই নিত্যপণ্যের দামে দীর্ঘদিন ধরেই হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বাজার অস্বস্তিতে ভোগান্তির অন্ত নেই। বিভিন্ন সময় নানা পণ্যের দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বাজার ছুটছে ঊর্ধ্বমুখী। সবজির বাজার দীর্ঘদিন ধরে চড়া, যা কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে লাগামছাড়া।
কয়েক দিন ধরে সব ধরনের সবজি, ডিম ও পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে, যার প্রভাব গতকাল শুক্রবার ও বাজারে দেখা গেছে। অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ডিম ও পেঁয়াজ কিনতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। প্রতি ডজন ডিমের দাম এখন ১৫০ টাকা এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
রাজধানীর হাতিরপুল ও মগবাজার বিভিন্ন বাজারে গতকাল শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে দেখা যায়, ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিমের (লাল) দাম ১৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ টাকা বেশি। তবে ডিমের ডজন পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ফার্মের মুরগির ডিম (সাদা) ডজনপ্রতি ১০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে।
একই বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় উঠেছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি। এক কেজি পেঁয়াজ পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারভেদে দামের ভিন্নতাও রয়েছে।
অন্যদিকে মালিবাগ বাজারে দেখা গেছে, ফার্মের মুরগির ডিমের (লাল) দাম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা। আর সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন। খুচরা দোকানগুলোয় প্রতিটি ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এই বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৮৫ টাকা।
কয়েক দিন ধরেই ডিমের বাজার চড়া জানিয়ে এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম একটু বেশি। গত সপ্তাহে ১০০ ডিম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। ডিম উৎপাদনের ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া এখন ডিমের সরবরাহ কিছুটা কম।
এক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, সারা বছর পেঁয়াজের দাম কম গেছে। এখন মৌসুমও নয়। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দামটা একটু বেড়েছে। সামনে আরও কমে আসবে। সরবরাহ কম হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
মগবাজার বাজারের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আনছি। আগে যে ব্রয়লার পাইকারিতে ১৫৫-১৬০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন তা ১৬৫-১৭০ টাকা হয়ে গেছে। খরচ যোগ করতেই খুচরা বাজারে ১৮০-১৮৫ টাকা পড়ে যাচ্ছে।
আরেক বিক্রেতা বলেন, শুক্রবারে চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ খুব একটা বাড়ে না। ইদানীং আবার বিভিন্ন কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে, তাই দাম কমানোর সুযোগ নেই।
অপরদিকে মাছের বাজারেও ক্রেতাদের খুব বেশি স্বস্তি মিলছে না। দেশি মাছের মধ্যে রুই, কাতল, শিং, টেংরা, শোলÑসবকিছুর দামই আগের তুলনায় কেজিতে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে ক্রেতারা প্রোটিনের জন্য বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করলেও কোথাও স্বস্তি পাচ্ছেন না। দেখা গেছে, রুই ও কাতল বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৪০ টাকা কেজিতে। পাবদা ৩৫০-৪০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০-৭০০, টেংরা ৬০০-৭০০, শিং ৪০০-৪৫০, কৈ ২০০-২২০ এবং তেলাপিয়া ও পাঙাশ পাওয়া যাচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, চলতি বছর খুচরায় গত বছরের চেয়ে গড়ে ১৬ শতাংশ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে এখন কেজি ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় ইলিশ মিলছে, যেখানে গত বছর দাম ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা।
বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই স্থিতিশীল আছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায় এবং খাসি ১ হাজার ২৫০ টাকায়। তবে উচ্চমূল্যের কারণে তা অনেকের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে।
ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোটিনের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস দ্রুতই বাদ পড়ে যাবে। তারা সরকারের কাছে বাজার মনিটরিং ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন।
এক মাংস বিক্রেতা বলেন, সকাল থেকে মাংস ঝুলিয়ে রেখেছি, বিক্রি খুব একটা নেই। সাধারণত মানুষের আম-রোজগার কমে গেছে, যে কারণে গরুর মাংসের ক্রেতাও কমে গেছে। অধিকাংশ মানুষ মাছ-মুরগিতেই চলে গেছে।
অন্যদিকে চালের চড়া দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতাই লক্ষ করা যায়নি। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বাকি সব চাল সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।
এর আগে গত ১২ আগস্ট এক প্রেস ব্রিফংয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। উপদেষ্টা তখন বলেন, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। শুধু ভারত থেকে নয়, ব্যবসায়ীরা যেখান থেকে আমদানি করতে চাইবে সেখান থেকেই অনুমতি দেওয়া হবে। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য পেঁয়াজের দাম কমানো, সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এজন্য যেখান থেকে দাম কম পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

Discussion about this post