Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 9:30 pm

সেতুর অভাবে দুর্ভোগে পনের গ্রামের মানুষ

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পলাশবাড়ি ইউনিয়নের চৌরঙ্গী কালির হাট রাস্তায় তিরনই নদীতে সেতুর অভাবে অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার বালিয়াডাঙ্গী ও রাণিশংকৈল উপজেলার পনের গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ও নদীর আশে পাশে বসবাসরত বসিন্দারা। এতে চরম দূভোগের শিকার হচ্ছেন। খরা মৌসুমে বাসের সাঁকো দিয়ে পার হেটে পার হওয়া গেলেও কোন যান বাহন চালানো যায়না। বর্ষা মৌসুমে হেটেও পার হওয়া সম্ভব হয়না।

সরজমিনে জানা যায়, বছরে পর বছর ধরে তারা বাশেঁর সাকো ও নৌকা ও পানিতে ভিজে নদী পার হচ্ছেন। বার বার সেতুটি নির্মানের কথা থাকলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।এতে জীবনের ঝুঁকি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ভানোর, বড় পলাশবাড়ী, দুওসুও ইউনিয়ন উপজেলার প্রায় ১২-১৫ গ্রামের প্রায় ৫০হাজার মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, দুওসুও এবং পলাশবাড়ি ইউনিয়নে চৌরঙ্গী কালির হাট রাস্তায় মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে তিরনই নদী। এই নদীতে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় কয়েক গ্রামের ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন কাজে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তাদের মৌলিক চাহিদা মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে, কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ, ফসলি জমির সার, ওষুধ পরিবহনে অসুবিধা, জমির ফসল বেচা-কেনায় অসুবিধা, শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত, মামলা ও অন্যান্য কাজে শহরে যাওয়াসহ অসুস্থ লোকজনের দ্রুত চিকিত্সা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই স্থানীয়রা, গ্রামবাসীদের কষ্টলাঘব ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত সেতুটি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, যুগ যুগ ধরে কোনো প্রয়োজনে নদীর পশ্চিম থেকে পূর্ব পাশে আসতে হলে তাদের নদীতে ভিজে পার হতে হয়। কোনো সাঁকো না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে তাদেরকে হাঁটুপানি পার হয়ে হেটে আসতে হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে তাদের প্রায় ৭-৮ কিমি ঘুরে আসতে হয়। বিশেষ করে গ্রামের কৃষক ও শিক্ষার্থীদের নদীর পূর্ব পাশে বাদামবাড়ি হাট, চৌরঙ্গি হাট, নেকমরদ হাট জিসি গান্ডীগাড়ী হাট, ধনীর হাট, বলিয়াডাঙ্গী সমীর উদিন কলেজ, সরকারি কলেজ ও জেলার ভালো স্কুল-কলেজসহ কোর্ট ও থাানায় আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আবার নদীর পূর্ব পার্শে রয়েছে নেকমরদ বাজার। ওই গ্রামের মানুষের অধিকাংশই ফসলি জমি ও আম বাগান রয়েছে নদীর পশ্চির্ম পাশে। নদীতে সেতু না থাকায় ওই ফসলি জমিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চাষাবাদ করতে পারে না। আবার উত্পাদিত ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতেও হিমশিম খেতে হয়। এ ছাড়া নদীর পশ্চিম তীরের কোনো বাজার বা হাট না থাকায় তাঁরা  পূর্ব তীরে হাটবাজারের ওপর নির্ভরশীল। নদীর পূর্বপাশে বাজার না থাকায় নদীর পূর্ব পারের পালপারা পুর গ্রামের লোকজন তাদের উত্পাদিত ফসল ঠিকমত বাজারে বিক্রি করতে না পেরে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

গান্ডীগাড়ী এলাকার সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন, কৃষক মো. আ. করিম, আ. রাাজ্জাক জানান, স্বানধীনতার পর থেকেই বাঁশের সাঁকো ছিল একমাত্র ভরসা। ওই সাঁকোই কয়েক গ্রামের মানষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু বর্ষা এলে সেই সাঁকো ভেঙে বিলীন হয়ে যায়। এখানে সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরি।

কিসমত পলাশবাড়ী কালির ঘাট এলাকার প্রবীণ ইশার আলী জানান, তিরনই নদীতে সেতু না থাকায় আমাদেরকে নানা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। নেতারা আসেন, ছবি তুলে বলেন এবার সেতু হবেই। সমপ্রতি উপষ্টো আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বালিয়াডাঙ্গীতে আসে এই গান্ডীগাড়ী তিরনই নদীর কালির ঘাটটি পরিদর্শনে আসে এখানে দ্রুত সেতু নির্মানের আশ্বাস দেন গ্রামবাসীদের। কিন্তু এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। তাই দ্রুত সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, সেতুর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়ে চলাচল করতে মানুষরা যে দুর্ভোগ পোহান তা বলে বোঝানো যায় না। স্থানীয়দের আবেদনের পেক্ষিতে উপজেলার পক্ষ থেকে থেকে বার বার সেতুটি নির্মাণের জন্য কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, কিন্তু সাড়া মিলছে না।

জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন বিশ্বাস বলেন, বালিয়াডাঙ্গীর তিরনই নদীর কালির ঘাটটি গূরুত্বপূর্ণ। সেখানে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ঘাটটি পরিদর্শন করেছেন। ঘাটটিতে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে সেতুটি দ্রুত নির্মিত হবে।