Print Date & Time : 18 September 2025 Thursday 3:28 am

সেপ্টেম্বরে রাশিয়া থেকে আরও বেশি তেল কিনেছে ভারত

 শেয়ার বিজ ডেস্ক : আগের দুই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রাশিয়া থেকে আরও বেশি তেল কিনেছে ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ভারতের পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর বদলে আরও বেশি তেল কিনছে ভারত।

রাশিয়ার তেল ইস্যুতে নিজেদের অবস্থানে অনড় অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। রাশিয়ার সঙ্গে এখনো একই সম্পর্ক বজায় রেখেছে দেশটি। ভারতের রিফাইনারগুলো রাশিয়ার তেল কেনার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। খবর: হিন্দুস্তান টাইমস।

সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ভারতীয় বন্দরে যে রুশ তেলের চালান পৌঁছেছে, তা জুলাই ও আগস্টের চেয়ে বেশি ছিল। তা থেকে স্পষ্ট মার্কিন চাপের তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ভারতের ওপর পড়েনি। প্রাথমিক ট্যাংকার ট্র্যাকিং ডেটা উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভারত প্রতিদিন গড়ে এক দশমিক ৭৩ মিলিয়ন ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে। তুলনামূলকভাবে জুলাই এবং আগস্টে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে এক দশমিক ৫৯ এবং এক দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রতিদিন)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের ট্যারিফের আসল প্রভাব কতটা পড়েছে, তা বোঝা যাবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের তেল আমদানির পরিসংখ্যান থেকে। সাধারণত রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের চুক্তিগুলো ছয় থেকে আট সপ্তাহ আগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের শুরুতে যে সরবরাহ করা হয়েছিল, তা আসলে জুলাইয়ে বুক করা হয়েছিল। রাশিয়ার বন্দরগুলো সেপ্টেম্বরে প্রতিদিন ১২ দশমিক ২ লাখ ব্যারেল তেল লোড করেছে ভারতে পাঠাবে বলে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত যেতে পারে। কারণ অনেক ট্যাংকারের রুট মিসরের পোর্ট সাইদে আছে। পরে সেগুলো সেখান থেকে হয়তো ভারতে আনা হবে।

এদিকে ভারত সরকার প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পদক্ষেপকে অযৌক্তিক এবং অবাস্তব বলে বর্ণনা করে এসেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কিনতে উৎসাহিত করেছিল। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজার যাতে স্থিতিশীল থাকতে পারে, তাই তখন আমেরিকা ভারতকে রুশ তেল কিনতে বলেছিল।

ভারত বারবার বলেছে, যেখান থেকে সস্তা তেল পাওয়া যায়, সেখান থেকেই তারা কিনবে। যেহেতু রাশিয়ার তেলের ওপর সরাসরি কোনো বিধিনিষেধ নেই, তাই আমদানি অব্যাহত থাকবে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার সংস্থাগুলোও স্পষ্ট করে দিয়েছে, তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো নতুন নির্দেশনা পায়নি।

ভারতের অপরিশোধিত তেলের চাহিদার প্রায় ৮৮ শতাংশই আমদানি করা হয়। রাশিয়া থেকে ভর্তুকিযুক্ত তেলের ফলে গত তিন বছরে ভারত কয়েক বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় করেছে। ২০২২ সালে যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল, তখন ভারতের মোট তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র দুই শতাংশ। এখন রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে, যা মোট আমদানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা অবনতি হতে দেখা গেছে। তবে গত মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাণিজ্যিক টানাপোড়েন ও কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই মঙ্গলবার রাতে ফোন করে মোদিকে শুভেচ্ছা জানান ট্রাম্প। এরপর মোদি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।