ড. মতিউর রহমান : লাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক সচেতনতা এবং অভিব্যক্তি এক নতুন রূপ নিয়েছেÑএটি আর কেবল রাজনৈতিক মঞ্চে বা সংগঠনের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এখন তা তীব্রভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে জেনারেশন জেড, যারা ডিজিটাল মাধ্যমে বড় হয়েছে এবং নিজেদের অভিব্যক্তিকে সংজ্ঞায়ি়ত করেছে ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন হলোÑএই ডিজিটাল দৃশ্যমানতা কি বাস্তব রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তরিত হচ্ছে, না কি এটি কেবল এক ধরনের ‘ডিজিটাল স্পেক্টাকল’, যা নজরদারি এবং পণ্যায়নের মধ্যেই আটকে পড়ে? এটি একবিংশ শতাব্দীর রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিশ্লেষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আধুনিক যোগাযোগ তাত্ত্বিকরা সোশ্যাল মিডিয়ার এই নতুন রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। জিজি পাপাচারিসি তার ‘আফেকটিভ পাবলিকস’ ধারণা অনুযায়ী দেখিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোয় আবেগভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক চেতনার উšে§ষ ঘটাতে পারে।
তার মতে, ঐতিহ্যবাহী পাবলিক স্ফিয়ার (যেমন সংবাদপত্র বা টেলিভিশন) যেখানে যুক্তি ও তথ্যের প্রাধান্য ছিল, সেখানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আবেগ একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। ক্রোধ, সহানুভূতি, আনন্দ বা হতাশার মতো আবেগগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা একটি সামাজিক সংহতি তৈরি করে এবং মানুষকে একত্র হতে উৎসাহিত করে। এটি নিছক যুক্তির ভিত্তিতে না হয়ে, বরং একটি ভাগ করা অনুভূতির ভিত্তিতে তৈরি হয়, যা সাধারণ মানুষকে একত্র করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।
একই সঙ্গে ম্যানুয়েল কাস্টেলসের ‘নেটওয়ার্ক সোসাইটি’ ধারণা বলছে যে এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় জনগণ নতুন করে সংযুক্ত হচ্ছেÑআন্দোলনের ভাষা, ছবি এবং আবেগ একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে একেকটি ক্লিকে। কাস্টেলস যুক্তি দেন যে, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের ফলে সমাজের ক্ষমতা কাঠামো স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং নেটওয়ার্কগুলো নতুন সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। তার মতে, সেলফ-কমিউনিকেশন বা ব্যবহারকারীদের দ্বারা উৎপন্ন যোগাযোগই এখন ক্ষমতার প্রধান উৎস।
বাংলাদেশে এই প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়, যেমন ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধÑসবকিছুই প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছে। এই আন্দোলনগুলোয় হাজার হাজার তরুণ-তরুণী ফেসবুক ইভেন্ট, গ্রুপ বা হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে একত্র হয়েছে, তথ্য বিনিময় করেছে এবং বাস্তবের রাজপথে নেমেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো কেবল তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়, বরং সেগুলো আন্দোলনের ‘সেন্টার অব গ্রাভিটি’ হিসেবে কাজ করেছে। তবে এই রাজনৈতিক অভিব্যক্তি কি যথার্থ ক্ষমতা তৈরি করতে পারছে? ড্যানাহ বয়েড তার বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, তরুণদের ডিজিটাল উপস্থিতি অনেক সময়ই পুঁজিবাদী ও নজরদারিমূলক কাঠামোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদিও সোশ্যাল মিডিয়া মানুষকে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়, কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মগুলো নিজস্ব বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজ করে এবং ব্যবহারকারীদের ডেটা সংগ্রহ করে।
এই ডেটাগুলো বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ তারা ব্যবহারকারীদের রুচি, আগ্রহ এবং রাজনৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে জানতে পারে। বাংলাদেশেও একটি দ্বৈত চিত্র চোখে পড়ে: একদিকে তরুণরা হাস্যরস, গান, কবিতা ও ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করছে, অন্যদিকে এসব কনটেন্ট আবার ভিউ, লাইক ও শেয়ারের সংখ্যার সঙ্গে ব্যবসায়ি়ক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ছে। যেমন একটি ব্যঙ্গাত্মক টিকটক ভিডিও হয়তো ভাইরাল হচ্ছে, কিন্তু তার পেছনে অ্যাডভান্সড অ্যালগরিদম কাজ করছে, যা কোম্পানির লাভ বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
এই প্রবণতা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয়, কারণ সক্রিয়তার মূল লক্ষ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন না হয়ে, বরং ডিজিটাল এনগেজমেন্ট এবং ডেটা সংগ্রহে পরিণত হয়। এটি এক ধরনের ক্লিকটিভজম, যেখানে অংশগ্রহণ অনলাইনে সীমাবদ্ধ থাকে এবং বাস্তব জগতে তার প্রভাব সীমিত হয়।
এই অবস্থাকে আমরা ‘আবেগের পণ্যায়ন’ বলতে পারি। জিজি পাপাচারিসির মতে, আবেগ আর শুধু ব্যক্তিগত বিষয় নয়Ñএটি হয়ে উঠেছে সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ। বাংলাদেশের তরুণরা যখন কষ্ট, রাগ বা বিদ্রোহের অনুভূতি প্রকাশ করে, তখন তা ব্যক্তি অভিজ্ঞতা ছাড়িয়ে এক ধরনের যৌথ আবেগে পরিণত হয়। কিন্তু সমস্যার জায়গা হলোÑএই আবেগগুলো কীভাবে রাজনৈতিক চাপে রূপ নেয়? কীভাবে এই যৌথ অভিব্যক্তি রাস্তায় নামে, নীতি-পরিবর্তন ঘটায়?
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এই আবেগগুলোকে এক ধরনের ‘ডিজিটাল ক্যাপিটাল’ বা ডিজিটাল সম্পদে পরিণত করে। প্রতিটি লাইক, শেয়ার, কমেন্টÑএগুলো কেবল এক একটি প্রতিক্রিয়া নয়, বরং ডেটা পয়েন্ট যা প্ল্যাটফর্মের জন্য মূল্যবান। এই ডেটাগুলো বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ, ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণ এবং পরিণামে লাভ বাড়াতে ব্যবহƒত হয়। ব্যবহারকারীরা অজান্তেই এই প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ‘ডিজিটাল শ্রম’ প্রদান করে, যার বিনিময়ে তারা কোনো আর্থিক মূল্য পায় না।
ফলে বিদ্রোহের আবেগও যখন একটি ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগে পরিণত হয়, তখন তা বাণিজ্যিক স্বার্থের অংশ হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়া আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ক্ষয় করে দিতে পারে; কারণ এটি আবেগকে একটি বাজারযোগ্য বস্তুতে পরিণত করে। উদাহরণস্বরূপ, #ঔঁংঃরপবভড়ৎঝঃঁফবহঃ হ্যাশট্যাগটি একদিকে যেমন সংহতি প্রকাশ করে, অন্যদিকে এটি টিকটক বা ফেসবুকে একটি ট্রেন্ডিং টপিক হিসেবে প্ল্যাটফর্মের ট্র্যাফিক বাড়ায়, যা তাদের বিজ্ঞাপনের আয় বৃদ্ধি করে।
বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে যেসব সীমাবদ্ধতা দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকার কর্তৃক সাইবার নজরদারি এবং কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় তরুণদের গ্রেপ্তার বা হয়রানির ঘটনা প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র এই নতুন নেটওয়ার্কড স্পেসগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এই আইন, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে বলে সমালোচিত, রাষ্ট্রের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। যখন কোনো রাজনৈতিক পোস্ট বা ভিডিও ভাইরাল হয়, তখন তা দ্রুত রাষ্ট্রের নজরে আসে এবং প্রায়ই সেই কনটেন্ট মুছে ফেলা হয় বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়।
ফলে এই মাধ্যমগুলো একদিকে প্রতিরোধ ও সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্র হলেও, অন্যদিকে তা হয়ে উঠছে নজরদারির ক্ষেত্র, যেখানে প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি স্ট্যাটাস, প্রতিটি কমেন্ট বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের সেলফ-সেন্সরশিপ তৈরি করে, যেখানে তারা নিজেদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এই নজরদারি ব্যবস্থা ডিজিটাল অভিব্যক্তির রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয় এবং অনেক সময় এটিকে কেবল একটি ‘নিরাপদ’ প্রদর্শনীতে পরিণত করে, যা বাস্তবজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে না। ভীতির এই সংস্কৃতি ডিজিটাল প্রতিবাদকে নিছক একটি ব্যক্তিগত ভেন্ট বা নিষ্ক্রিয় প্রদর্শনীতে রূপান্তরিত করে।
একই সঙ্গে আছে পুঁজিবাদী পণ্যায়নের চক্র। একটি রাজনৈতিক পোস্ট যদি যথেষ্ট রসাত্মক হয়, তাহলে সেটিকে ব্র্যান্ড, কোম্পানি কিংবা ইউটিউবের মনিটাইজড অ্যালগরিদম ব্যবহার করে পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এর মানে হলো, প্রতিবাদ বা সমালোচনামূলক কনটেন্টও বিজ্ঞাপনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে পারে। এ কারণে আমরা দেখি, কোনো কোনো কনটেন্ট যেমন ন্যায্যতা ও প্রতিবাদের বার্তা দেয়, ঠিক তেমনি সেগুলো বিজ্ঞাপন, স্পনসরশিপ, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেও ব্যবহƒত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন তরুণ অ্যাক্টিভিস্টের জনপ্রিয় রাজনৈতিক ভিডিও হয়তো হাজার হাজার মানুষের কাছে প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে, কিন্তু একই সঙ্গে সেই ভিডিওর ভিউ থেকে ইউটিউব বা টিকটক লাভ করছে এবং সেই অ্যাক্টিভিস্ট নিজেও স্পনসরশিপ বা ব্র্যান্ড ডিলের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। এই দ্বৈততা বুঝতে না পারলে সোশ্যাল মিডিয়ার রাজনৈতিক শক্তি অকার্যকর হতে পারে। এটি রাজনৈতিক সক্রিয়তাকে এক ধরনের ‘শোপিস’-এ পরিণত করে, যেখানে মূল উদ্দেশ্য (রাজনৈতিক পরিবর্তন) গৌণ হয়ে যায় এবং ‘লাইক’ ও ‘শেয়ার’ বৃদ্ধি প্রধান হয়ে ওঠে। ইনফ্লুয়েন্সাররা প্রায়ই রাজনৈতিক বার্তাগুলোকেও এক ধরনের ‘কন্টেন্ট’ হিসেবে দেখে, যা তাদের ফলোয়ার বাড়াতে বা ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে গভীর রাজনৈতিক আলোচনা না হয়ে এটি একটি পৃষ্ঠতলীয় আলোচনায় পরিণত হয়।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিরোধী ক্ষমতাকে একেবারে খাটো করে দেখা যায় না। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ফেসবুক লাইভ, রিল, ইউটিউব ভিডিও, টুইটার ট্রেন্ডÑসবকিছু একজোট হয়ে বাস্তব রাজপথে ছাত্রদের নামতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই আন্দোলনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান, কৌশল নির্ধারণ এবং জনমত গঠনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করেছে। গুজব বা ভুল তথ্য দ্রুত যাচাই করার সুযোগ না থাকলেও, আন্দোলনের মূল বার্তাগুলো এই মাধ্যমগুলোর সাহায্যেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছে।
আবেগ, দৃশ্যমানতা এবং নেটওয়ার্ক সম্পৃক্ততা মিলে এক ধরনের ‘ডিজিটাল জনমত’ তৈরি করেছে, যা সরকার ও প্রশাসনের নীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, আবেগ ও নেটওয়ার্ক সংযোগ কেবল বিক্রি হবার উপাদান নয়, বরং তা রাজনৈতিক সত্ত্বা গঠনের মাধ্যমও হতে পারে। যখন ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম বাস্তবজীবনে রূপ নেয় এবং মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, তখন তার রাজনৈতিক ক্ষমতা স্পষ্ট হয়। এটি প্রমাণ করে যে, যথাযথ ব্যবহার এবং সংগঠিত প্রচেষ্টা থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে, বিশেষ করে যখন ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যমগুলো (যেমন টেলিভিশন বা সংবাদপত্র) নিয়ন্ত্রিত থাকে।
তবে এটি নির্ভর করে সেই ব্যবহারকারীর ওপরÑসে কি কেবল ডিজিটাল দর্শক, না কি সে নেটওয়ার্কড সক্রিয় নাগরিক? এটাই মূল প্রশ্ন। যাদের উপস্থিতি শুধু ফলোয়ার বাড়ানো বা ট্রেন্ডিং টপিক তৈরি করাতে সীমাবদ্ধ, তারা রাজনৈতিকভাবে দৃশ্যমান হলেও বাস্তব ক্ষমতার ক্ষেত্রে তাদের অবদান কম। তারা মূলত ‘পারফরম্যান্স অ্যাক্টিভিজম’ বা ‘ক্লিকটিভজম’-এ জড়িত থাকে, যেখানে অনলাইন উপস্থিতিই শেষ কথা। তাদের উদ্দেশ্য থাকে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং বা জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা, রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়।
অপরদিকে, যারা সোশ্যাল মিডিয়াকে সংগঠনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, যারা অনলাইন ডিসকোর্সকে বাস্তবজীবনের আন্দোলনে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়, তারা রাজনৈতিকভাবে বেশি কার্যকর। তারা কেবল পোস্ট করে না, বরং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে, অফলাইন মিটিংয়ের আয়োজন করে এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করে। এই সক্রিয় নাগরিকরাই পারে ডিজিটাল দৃশ্যমানতাকে বাস্তব রাজনৈতিক ক্ষমতায় রূপান্তরিত করতে। তাদের প্রচেষ্টা শুধু লাইক বা শেয়ারের সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, বরং তারা সমাজের নীতি এবং কাঠামোতে কতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে, তা দিয়ে পরিমাপ করা উচিত।
সুতরাং জেনারেশন জেড এবং তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার একটি জটিল দ্বৈততায় আবদ্ধÑএকদিকে রাজনৈতিক সংহতির নতুন ভুবন, অন্যদিকে আবেগের পণ্যায়ন ও রাষ্ট্রের নজরদারির জাল। এই দ্বৈততা বুঝে তবেই আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে: সোশ্যাল মিডিয়া কি কেবল ‘ডিজিটাল স্পেক্টাকল’, না কি এটি বাস্তব পরিবর্তনের ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে?
এর উত্তর ভবিষ্যতের হাতে, কিন্তু সম্ভাবনার বীজ ইতোমধ্যেই বপন হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে, তরুণ প্রজš§কে কেবল ডিজিটাল প্রদর্শনীতে মগ্ন না থেকে, নিজেদের অনলাইন অ্যাক্টিভিজমকে বাস্তবজীবনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, সংগঠিত প্রচেষ্টা এবং রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষমতা।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এই সোশ্যাল মিডিয়া প্রজš§ই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং তাদের ডিজিটাল কর্মকাণ্ড কীভাবে বাস্তবের মাটিতে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এই সংগ্রাম কেবল প্রযুক্তির সঙ্গে নয়, বরং ক্ষমতার কাঠামো এবং পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধেও একটি নৈতিক এবং সামাজিক সংগ্রাম।
গবেষক ও উন্নয়নকর্মী