স্পিনিং শিল্প মূলত আঁশ বা তন্তু থেকে সুতা তৈরির প্রক্রিয়া, যেখানে আঁশগুলোকে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টেনে পাকানো হয় এবং একসঙ্গে জড়ো করে লম্বা ও অবিচ্ছিন্ন সুতো তৈরি করা হয়। এটা তুলা, পশম, রেশম বা সিনথেটিক ফাইবার থেকে হতে পারে। এটি স্পিনিং মিলগুলোয় আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে করা হয়।
দেশের এই স্পিনিং মিলগুলো এখন সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। নানামুখী সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতায় স্পিনিং মিলগুলো এখন ঝুঁকির মুখে।
গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, প্রায় ৪০ শতাংশ স্পিনিং কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে লক্ষাধিক কর্মী বেকার হয়ে গেছেন। বাকি কারখানাগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় খাতটিকে টিকিয়ে রাখতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গার্মেন্ট খাতে বিদ্যমান পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা হঠাৎ কমিয়ে ১.৫ শতাংশ করায় সুতা শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশীয় সুতা ব্যবহারকারী গার্মেন্টস রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন করে ১০ শতাংশ প্রণোদনা এবং আমদানি করা সুতার ওপর ১০ শতাংশ সেফগার্ড ডিউটি আরোপের দাবি জানানো হয়।
তিন দফায় গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম ৩৫০ শতাংশ বাড়ানো হলেও টেক্সটাইল পণ্যের বিক্রি মূল্য সমন্বয় করা হয়নি। সমস্যার শুরু মূলত এখান থেকে।
একটি শিল্প যদি তার উৎপাদন ও পণ্য বিক্রির মূল্য সমন্বয় করতে না পারে, তাহলে ওই শিল্পে বিপর্যয় অনিবার্য। স্পিনিং শিল্পের বর্তমান অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা ও ডলার সংকট—এসব কারণে দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন ব্যয় বাড়তে বাড়তে শিল্পটি আজ চরম সংকটে পড়ে গেছে।
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে শক্তিশালী করার পেছনে স্পিনিং খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা তুলা থেকে সুতা উৎপাদন, দক্ষ শ্রমশক্তির ব্যবহার, আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা—সব মিলিয়ে স্পিনিং শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
অনেক দেশ সরকারিভাবে প্রণোদনা দিয়ে কম দামে সুতা রপ্তানি করছে। এতে দেশীয় উৎপাদকরা টিকতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম মেনে আমদানি করা সুতার ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বা সেফগার্ড ডিউটি আরোপ দরকার। রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর জন্য দুই বছরের জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল থেকে ৩০ শতাংশ রিবেট দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ মানুষ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। স্পিনিং শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই সংকটের মূলে নজর দিতে হবে। সরকার আন্তরিক না হলে এই শিল্পে সংকট রয়েই যাবে। বাংলাদেশের স্পিনিং শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকরি রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।
প্রিন্ট করুন









Discussion about this post