শেয়ার বিজ ডেস্ক : স্পেনে ভয়াবহ দাবানলে একজন নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রচণ্ড তাপদাহ ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। খবর এএফপির।
সরকারি সূত্রে জানানো হয়, রাজধানী মাদ্রিদের উত্তরে ধনী আবাসিক এলাকা ত্রেস কান্তোসে দাউ দাউ করে আগুন ছড়িয়ে পড়লে এক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। চলমান তাপপ্রবাহে স্পেনে এ-ই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।
মাদ্রিদের আঞ্চলিক সরকারের প্রধান ইসাবেল দিয়াস আয়ুসো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেয়া বার্তায় এই মৃত্যুর ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ত্রেস কান্তোস থেকে শত শত বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মাদ্রিদের আঞ্চলিক পরিবেশ প্রধান কার্লোস নোভিয়ো জানান, মাত্র ৪০ মিনিটে আগুন ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।
তবে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কর্মকর্তারা জানান, ত্রেস কান্তোসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুসিয়ার তারিফার জনপ্রিয় সৈকত এলাকার আশপাশ থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মাসের শুরুতেও একই এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল।
আন্দালুসিয়ার আঞ্চলিক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও সানজ বলেন, আমরা শেষ মুহূর্তে আবাসিক এলাকা রক্ষা করতে সক্ষম হই। তিনি জানান, উদ্ধারকাজে সহায়তাকারী এক পুলিশ সদস্য গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়েছেন।
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কাস্তিয়া ও লেওন অঞ্চলে সোমবার একদিনেই ৩০টির বেশি দাবানলের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি আগুন লাস মেদুলাসে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই এলাকাটি প্রাচীন রোমান সোনার খনির জন্য ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।
এই দাবানল চলছে এমন সময় যখন চলমান তাপপ্রবাহের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন পার করছে স্পেন। দেশটির সব অঞ্চলেই আবহাওয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে এবং রাতেও তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে না।
এদিকে ইতালির ভিসুভিয়াস জাতীয় উদ্যানে টানা তিনদিন ধরে দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন দমকল কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রায় তিন কিলোমিটার প্রশস্ত এই আগুন শত শত হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করছে। তীব্র বাতাস দাবানলকে আরও আগ্রাসী করে তুলছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ভিসুভিয়াস জাতীয় উদ্যান এলাকায় দর্শনার্থীদের আনাগোনা ও সবগুলো হাইকিং রুট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দাবানলের কবলে ইউরোপের বলকান অঞ্চল কসোভোর মিরাশ গ্রামের বাসিন্দারা। শত শত ঘরবাড়ি গ্রাস করার আগেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। কিন্তু দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারছে না, যার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক বাড়িঘরের পেছনে ঘন ধোঁয়ার কারণে জনমনে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘দমকল কর্মীরা এসেছিল, কিন্তু তারা আগুন নেভাতে কোনও পানি আনতে পারেননি। সঙ্গে কোনো সরঞ্জাম ছিল না। যতটা সম্ভব আমাদের স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে তারাও আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমার প্রায় ৭ হেক্টর বাগানের সব গাছ পুড়ে গেছে। এছাড়া চাচাতো ভাই-বোন এবং প্রতিবেশীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।’
এদিকে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের কাছে অবস্থিত বিলুপ্ত আগ্নেয়গিরি আর্থার’স সিটেও ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল, যা দূর থেকে দেখছেন পথচারী এবং পর্যটকরা। তবে ঝুঁকির শঙ্কায়, গাড়িচালক এবং পথচারীদের এই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।