মীর আনিস : জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলার আসামি হয়েও এখনও নিয়মিত অফিস করছেন ঢাকা ওয়াসার মডস্ জোন ৪-এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল আলম। গ্রেপ্তার এড়িয়ে কীভাবে তিনি নিয়মিত অফিস করছেন, তা নিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে বাড্ডার পারভেজ ব্যাপারী নিহত হয়। এ ঘটনায় পারভেজ ব্যাপারীর বাবা সবুজ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আদালতে মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত অন্যান্য আসামির মধ্যে একজন ছিলেন ওয়াসার মডস জোন ৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল আলম। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর চলতি বছরের ৫ মে বদরুল আলমকে উপব্যবস্থাপকের (আরপিঅ্যান্ডডি) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
আরও জানা গেছে, গুলশান থানার সিআর মামলায় (নম্বর ৩১৬/২৫ (আমলি আদালত) শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিমসহ অনেকেই আসামি করা হয়। ওই মামলার ১৮১ নম্বর আসামি হলেন ওয়াসার কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল আলম।
অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের স্টাফ অফিসার ছিলেন বদরুল আলম। এমডির ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে ওয়াসাকে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছিলেন এই বদরুল আলম। তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাকসিম এ খানের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজের প্রধান সহযোগী হিসেবে বদরুল আলমের নাম জড়িয়ে আছে। এর মধ্যে দিয়ে কোটি কোটি টাকা অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বদরুল। নামে-বেনামে কিনেছেন জমি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি-বাড়ি। বিদেশে পাচার করেছেন কোটি কোটি টাকা। নিজে ব্যবহার করছেন ২ কোটি টাকা দামের গাড়ি। বাড্ডার হোসেন মর্কেটে আছে চারটি দোকান। নিজের এলাকা ফেনীতে নামে বেনামে কিনেছেন শত শত বিঘা কৃষিজমি।
সরকারের পতনের পরেও ওয়াসার মডস্ জোন ৪-এ বহাল থাকায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বদরুল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপদে সরিয়ে দিয়েছেন অন্য জায়গায়।
মে মাসে তাকে ওএসডি করে উপব্যবস্থাপকের দপ্তরে সংযুক্ত করা হলেও দমেনি বদরুল আলমের চক্রান্ত। অবৈধ আয়ের টাকা তিনি বিনিয়োগ করছেন বর্তমান সরকারবিরোধী নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ পক্ষের কার্যক্রমে। অভিযোগ আছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন বদরুল আলম। ধারণা করা হয়, অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ তিনি আন্দোলন দমাতে ব্যয় করেছেন। ঢাকা ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে একই তথ্য পাওয়া যায়। তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বৈরাচারের দোসর এবং খুনের মামলার আসামি এখনও ওয়াসায় বহাল থাকেন কীভাবে? এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এটা জুলাই আন্দোলনের চেতনাবিরোধী কার্যক্রম। ঢাকা ওয়াসার বিষয়টি দ্রুত আমলে নেয়া দরকার।’ এ ব্যাপারে বদরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন (ভোগাস)। আমার নামে হত্যা মামলা হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমার বিরোধী পক্ষ আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
ওয়াসার ডিএমডি ড. মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (আরপিইঅ্যান্ডডি) শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বদরুল আলমকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধিতা করার কারণে ওএসডি করা হয়েছে। হত্যা মামলার আসামি হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওয়াসার জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ‘বদরুল আলম হত্যা মামলার আসামি। এই তথ্য আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি আমরা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবগত করব।’

Discussion about this post