শেয়ার বিজ ডেস্ক : হামাসের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনেই বলেছেন, হামাস যে কোনো চুক্তি চায় না, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল এখন তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ‘বিকল্প’ পথ ভাবছে। এই লক্ষ্যগুলো হলো গাজা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার ও সেখানে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞে অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে; অধিকাংশ মানুষই গৃহহীন।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বিশ্বাস, হামাস নেতাদের এখন ‘খুঁজে বের করে’ নির্মূল করা হবে। তিনি দাবি করেন, ‘হামাস আদতে কোনো চুক্তি করতে চায়নি। আমার মনে হয় তারা মরতে চায়। এবং এটা খুবই খারাপ। আর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কাজটা শেষ করতেই হবে।’
এসব মন্তব্য থেকে এটুকু স্পষ্ট যে নিকট ভবিষ্যতে আলোচনা আবার শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন একটি সময়ে এ বিষয়গুলো সামনে এল যখন গাজার যুদ্ধ থামানোর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। গোটা উপত্যকাই অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) সেখানে সহায়তা বিতরণ করতে পারছে। কিন্তু তারা যেটুকু দিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। গাজায় আরও অনেক সহায়তা প্রয়োজন। এরই মধ্যে সেখানে অপুষ্টিতে ভুগে মানুষ মারা যেতে শুরু করেছে। এ ছাড়াও জিএইচএফের সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে গুলির মুখে পড়েছে মানুষ- এমন ঘটনাও ঘটেছে।
গাজার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছে বিশ্ব। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, তার দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এটি হয়ে গেলে ফ্রান্সই হবে বিশ্বের প্রথম বড় মাপের পশ্চিমা শক্তি, যারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও জার্মানি জানিয়েছে, তারা এটি করতে এখনো প্রস্তুত নয়। তবে তারা ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চেয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, শুধু আলোচনার মাধ্যমে শান্তিচুক্তি হলেই তার সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে মাখোঁর পদক্ষেপকে খারিজ করে দিয়েছেন। তার মতে, মাখোঁ যা বলছেন, তাতে কিছু যায় আসে না। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (মাখোঁ) অত্যন্ত ভালো মানুষ। আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু ওই বিবৃতির গুরুত্ব নেই।’
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কাতারে যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে নিজেদের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নিজেদের পাল্টা প্রস্তাব জমা দেয়।
সূত্ররা প্রাথমিকভাবে গত বৃহস্পতিবার জানায়, ইসরায়েলের প্রতিনিধি প্রত্যাহারের মানে এই নয় যে আলোচনা সংকটের মুখে রয়েছে। তবে নেতানিয়াহুর মন্তব্য ইঙ্গিত করছে যে ইসরায়েলের অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে পরবর্তী সময়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ জানান, আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য হামাস দায়ী। অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, উইটকফ ঠিক বলছেন। এদিকে, হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম ফেসবুকে বলেছেন, আলোচনা গঠনমূলক ছিল। কিন্তু তিনি উইটকফের মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেছেন। নাইম বলেছেন, উইটকফ, ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে চাপ তৈরি করছে।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, সর্বশেষ আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছিল। আলোচনা স্থগিত হওয়া পুরো প্রক্রিয়ার সাধারণ একটি অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে তারা যুদ্ধবিরতির নতুন চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন বলেও উল্লেখ করেছেন।
আরআর/