Print Date & Time : 21 September 2025 Sunday 7:22 am

হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি রপ্তানির সম্ভাবনা ১২০০ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ৫ থেকে ৭ বছরে এক হাজার ২০০ কোটি ডলারের হালকা প্রকৌশল যন্ত্রপাতি রপ্তানির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে রপ্তানি আয় বছরে ৭০-৮০ কোটি ডলার।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনে গতকাল শনিবার ‘রোড টু মেড ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড অ্যাগ্রো মেশিনারি ফেয়ার ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। তিনি এ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট রয়েছে। স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ।
একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, জাতীয় শিল্পনীতিতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রাংশ ও হালকা প্রকৌশলÑএই তিনটি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এই খাতগুলো উৎপাদনশীল শিল্পের বিকাশ, রপ্তানির বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি ও অটোমোবাইলস খাত নিয়ে এ ধরনের মেলার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। পাশাপাশি এ খাতে নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তৈরি হবে।
তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনে চলমান দুদিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল রয়েছে। পাশাপাশি শিল্পসহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে আরও ১২টি। বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও এগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।
শিল্পনীতির লক্ষ্য প্রসঙ্গে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, জাতীয় শিল্পনীতির লক্ষ্য হলো দেশের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে নীতিসহায়তা, কর ছাড় ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার এ কাজ এগিয়ে নিতে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।
মূল প্রবন্ধে মাসরুর রিয়াজ বলেন, যান্ত্রিকীকরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিযন্ত্র আমদানি, খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণসহ পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ ব্যবস্থার চাহিদা তৈরি হবে। বর্তমানে দেশের কৃষিযন্ত্রের মাত্র ২০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হয়, বাকি ৮০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। সঠিক নীতি, অর্থায়ন, দক্ষ জনবল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা গেলে এই ২০ শতাংশ অচিরেই ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, কৃষি উৎপাদনে আরেকটি বড় সংকট হলো অবকাঠামো ও যান্ত্রিক ঘাটতির কারণে ফসলের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে ফল ও শাকসবজিতে এ অপচয় বেশি। ফলে খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার ও রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও লজিস্টিকস উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা নিয়ে চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৮০ হাজার মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট রয়েছে। স্থানীয় বাজারের আকার প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এবং খাতটির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়। আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে তা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে। কৃষি, প্রবাসী আয় ও গার্মেন্টস খাত অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হলেও নতুন কর্মসংস্থান ও টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য হালকা প্রকৌশল শিল্পে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বে এগ্রিকালচার মেশিনারি খাতের বাজার ১ দশমিক ৯৭ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশ এখনও সেই বাজারে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্থানীয় বাজারেই হালকা প্রকৌশলের সম্ভাবনা প্রায় ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এর অর্ধেকও আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। অটোমোবাইল শিল্পের উদাহরণ থেকে বোঝা যায়, স্থানীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ওবায়দুর রহমান, র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ ও এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।