নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য, গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ৭৪০ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন বিভাগের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হওয়া ৭৪০ জন রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী রাজধানী ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হয়েছেন ২৩৭ জন রোগী।
ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশন ছাড়া) নতুনভাবে ভর্তি হয়েছেন ১৬৫ জন। এছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলাগুলোয় (ঢাকা সিটি করপোরেশন ছাড়া) ভর্তি হয়েছেন ১৪৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশন ছাড়া) ৭৭ জন, খুলনা বিভাগে ৫২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, সিলেট বিভাগে ৯ জন এবং রংপুর বিভাগে ৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করা ১২ জনের মধ্যে ছয়জন নারী এবং ছয়জন পুরুষ। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে সর্বাধিক ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটায় চিকিৎসকের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর (গতকাল) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৯ জনে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪১ হাজার ৮৩১ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে হারে রোগী বাড়ছে, তাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপে রয়েছে। তবে হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবার আগে প্রয়োজন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সচেতনতা। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা, জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা, ফুলের টব, ডাবের খোসা, বালতি, ভাঙা পাত্র ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, মানুষ প্রাথমিক উপসর্গ উপেক্ষা করছেন। জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমিভাব, শরীরে র্যাশ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মশকনিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের সব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ইউনিট এবং প্রয়োজনীয় বেড নিশ্চিত করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রতিদিনই নতুন আতঙ্ক তৈরি করছে। এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনগুলোয় ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন সম্মিলিত ও কার্যকর পদক্ষেপ।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন। এর আগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।