Print Date & Time : 15 November 2025 Saturday 7:24 pm

২৩০ বছর পর এক সেন্টের মুদ্রা উৎপাদন বন্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ২৩০ বছরেরও বেশি সময় পর এক সেন্ট মূল্যের মুদ্রা বা পেনির উৎপাদন বন্ধ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার ফিলাডেলফিয়ার মিন্টে তৈরি হবে শেষ ব্যাচের এক সেন্ট মূল্যের মুদ্রা বা পেনি। এর মধ্য দিয়েই দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে চলা এই ঐতিহাসিক অধ্যায়ের ইতি ঘটছে। খবর: আল জাজিরা।

জানা গেছে, পেনির পরে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর পড়েছে পাঁচ সেন্টের নিকেল মুদ্রার দিকে, যা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১৪ সেন্ট। তবে রিচমন্ড ফেডের হিসাব অনুযায়ী, নিকেল উৎপাদন বন্ধ করা হলে এর প্রভাব আরও বড় হবে; এতে বছরে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার অতিরিক্ত খরচ পড়তে পারে ক্রেতাদের ওপর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পেনির ঘাটতির কারণে এরই মধ্যে পণ্যের দাম সমন্বয় করতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে প্রচলিত পেনিগুলো আপাতত চলবে।

মার্কিন সরকারের দাবি, পেনি উৎপাদন বন্ধের ফলে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করে বলেছিলেন, আমাদের মহান জাতির বাজেট থেকে অপচয় দূর করব।

বর্তমানে গৃহযুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের প্রতিকৃতি-সংবলিত এই তামা-আবৃত দস্তার মুদ্রা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় চার সেন্ট, অর্থাৎ এর মূল্যের চারগুণ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এই উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত বছরে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার সাশ্রয় করবে।

দপ্তরটির ভাষ্য, ইলেকট্রনিক লেনদেনের ব্যাপক প্রসারের ফলে ১৭৯৩ সালে চালু হওয়া এই এক সেন্ট মুদ্রা আজ বাস্তবে প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।

তাদের অনুমান, বর্তমানে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ৩০ হাজার কোটি পেনি বাজারে প্রচলিত রয়েছে, যা দেশটির বাণিজ্যিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।

এই বিপুলসংখ্যক পেনির বড় একটি অংশ ব্যবহারের বাইরে পড়ে থাকে। ২০২২ সালের এক সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত সব কয়েনের প্রায় ৬০ শতাংশ, অর্থাৎ গড়ে প্রতি পরিবারের ৬০ থেকে ৯০ ডলারের মুদ্রা ঘরের ড্রয়ার বা পিগি ব্যাংকে জমা থাকে। কারণ তা খরচ বা বিনিময় করার মতো মূল্যবান মনে হয় না।

এদিকে সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রর সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আসছে নতুন চিন্তা। দাম রাউন্ড আপ বা ওপরে উঠিয়ে নির্ধারণের কারণে পেনি তুলে দেয়ার ফলে পণ্যের মূল্য সামান্য বাড়তে পারে। রিচমন্ড ফেডারেল রিজার্ভের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এতে ভোক্তাদের বছরে প্রায় ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।

অন্য দেশগুলোও এরই মধ্যে তাদের স্বল্পমূল্যের মুদ্রা বাদ দিয়েছে। কানাডা ২০১২ সালে এক সেন্টের শেষ ব্যাচ তৈরি করে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নব্বইয়ের দশকেই এক ও দুই সেন্টের মুদ্রা বাতিল করে। আর নিউজিল্যান্ড ২০০৬ সালে পাঁচ সেন্ট মুদ্রার উৎপাদনও বন্ধ করে দেয়।

যুক্তরাজ্যও ২০১৮ সালে এক পেনি মুদ্রা বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল, যদিও পরে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। তবে ইলেকট্রনিক লেনদেন বৃদ্ধির কারণে ২০২৪ সালে দেশটি ১ পেনি ও ২ পেনির মুদ্রা তৈরিও বন্ধ করেছে, কারণ প্রচলিত মুদ্রাই যথেষ্ট পরিমাণে মজুত রয়েছে।