মুক্তা বেগম, গাজীপুর : ‘আমাদের শহর, আমরাই পরিষ্কার রাখব’ এই প্রতিপাদ্যে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি কর্পোরেশন। যার আয়তন ৩২৯.৫৩ বর্গকিলোমিটার। এই বিশাল নগরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যমে বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। এই কর্মসূচির প্রথম ধাপ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ৩৪নং ওয়ার্ড থেকে বৃহৎ পরিসরে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়। শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে র্যলির মাধ্যমে কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
জানা যায়, গাজীপুর সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি বর্জ্য উত্পাদনকারী ওয়ার্ড হিসেবে চিহ্নিত। এলাকা জনবহুল, বসতি ঘিঞ্জি এবং শিল্পকারখানাপূর্ণ হওয়ায় যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা, ড্রেন অবরুদ্ধ হওয়া, পলিথিনের স্তুপ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণে জাইকার কারিগরি সহায়তায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এটিকে মডেল ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষ ক্যাম্পেইন হাতে নিয়েছে।
এদিন সকাল ১০টায় শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলাম। পরে ৩৪নং ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সচেতনতা র্যালি হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা যেখানে-সেখানে থাকা ময়লা সংগ্রহ করে ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট স্থানে জমা রাখেন।ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে ময়লা রাখার নির্দিষ্ট বাকেট স্থাপন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা জিসিসির সিনিয়র নগর পরিকল্পনাবিদ মইনুল ইসলাম বলেন, পরিষ্কার শহর গড়তে হলে আগে আমাদের নিজেদের আচরণ বদলাতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য জমা দিলেই শহর পরিষ্কার রাখার ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেললে কোনোভাবেই পরিষ্কার নগর গড়া সম্ভব নয়।
বক্তারা জানান, পলিথিন এক ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ। এটি পচে না, ড্রেন-নালা বন্ধ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, পরিবেশে ছড়িয়ে মানবদেহের খাদ্যচক্রেও প্রবেশ করছে। যেখানে-সেখানে পলিথিন ফেলা এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির বড় কারণ-এ দাবিও করেন বক্তারা।
সারা দিনের কর্মসূচিতে আরও ছিল-জনসচেতনতামূলক মাইকিং, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে সচেতনতামূলক সভা, স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, অভিভাবকদের নিয়ে জৈব ও অজৈব বর্জ্য চেনার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস , দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পাপড়ি বিশ্বাস ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া। এছাড়া অভিভাবকদের মধ্য থেকে জৈব ও অজৈব বর্জ্য চেনার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন তানিয়া, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন অঞ্জনা বিশ্বাস, তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রেহেনা পারভীন। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের মেডেল প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফরোজা বেগম, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকরাম হোসেন, জাইকার ইউডিসিজিপি প্রকল্পের টিম লিডার মিস্টার রেমন্ড গার্সিয়া গো, গাজীপুর সিটির সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট শরিফুল আলম ম্লল, প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা পারভিন, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রবি ইসলাম প্রামাণিক, সহকারী প্রকৌশলী আফসানা জামান প্রান্তি, ইউডিসিজিপি প্রকল্পের এআরই ফরহাদ হাসান, প্রকল্পের হিসাবরক্ষক আমির আজম, ট্রেনিং অফিসার আজিজুল হক, সলিড ওয়েস্ট ইন্সপেক্টর পাপিয়া ইয়াসমিন সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এই ক্যাম্পেইন যদি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে-তাহলে ৩৪নং ওয়ার্ড থেকে শুরু হওয়া পরিচ্ছন্ন অভিযান ধীরে ধীরে পুরো গাজীপুরকে একটি স্মার্ট, পরিচ্ছন্ন, টেকসই নগরীতে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
