Print Date & Time : 20 November 2025 Thursday 3:15 pm

৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ঝুলে আছে—দুর্ভোগে নাসিরনগরের হাওরাঞ্চল

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাওরবেষ্টিত গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদ ও গোয়ালনগর বাজার (আইডি–৪১২৯০৩০০২) পর্যন্ত সাবমার্সিবল রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কারের প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে আছে। ২০২৩ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেলেও কাজের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, অবহেলিত ও অনুন্নত গোয়ালনগর ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় ২ কিলোমিটার নতুন সাবমার্সিবল রাস্তা নির্মাণ এবং ৩ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের কথা ছিল। কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, তদারকি ও নজরদারির অভাবেই প্রকল্পটি বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে।

গোয়ালনগর ইউনিয়নের ভিটাঢুপি, রামপুর, নওগাঁ, মাইজখোলা, কদমতলী, ঝামারবালী, লালুয়ারটুকসহ বড় একটি এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। হাওরবেষ্টিত হওয়ায় বর্ষায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর পাড়, শুকনো খাল ও ক্ষেতের আইল ধরে কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়। মৌলিক সেবা ও সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার মানুষ।

শিক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে বড় সংকট। স্থানীয়ভাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও বহু শিক্ষার্থীকে যেতে হয় কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। শুষ্ক মৌসুমে ২–৩ কিলোমিটার কাঁদায় হাঁটতে হয়, বর্ষায় উত্তাল ঢেউ ও স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে খেয়াঘাটে পৌঁছাতে হয়। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে অনেক শিক্ষার্থীই আর স্কুলে যেতে পারে না। এলাকাবাসীর দাবি, যোগাযোগ সংকটের কারণেই বাল্যবিয়ে, ঝরে পড়া এবং কিশোর অপরাধ বাড়ছে।

স্বাস্থ্যসেবাও চরমভাবে ব্যাহত। জরুরি রোগীকে উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই করুণ যে গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে বহু পরিবারকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

গোয়ালনগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলছেন, সড়কটি দ্রুত নির্মাণ ও সংস্কার হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও জীবনমান উন্নয়নে বড় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা অব্যাহত থাকলে পুরো ইউনিয়ন আরও পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

স্থানীয়দের আহ্বান—
“রাস্তা না হলে কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রকল্পটি দ্রুত চালু করা হোক।”