Print Date & Time : 26 August 2025 Tuesday 5:36 pm

৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা বৃষ্টি ও মৌসুমের শেষের প্রভাবে রাজধানীর বাজারে সবজির দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। একমাত্র কাঁচা পেঁপে ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজির দামই ঊর্ধ্বমুখী। তবে করলা, বেগুন ও টমেটোর মতো সবজিগুলোর দাম আরও বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার সবজির দামের এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে বিক্রেতারা সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মৌসুম শেষ হওয়া, সরবরাহ কম এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টির অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।
বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, টমেটো প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, পটোল প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকায়, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকায় এবং কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি ধুন্দল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায়, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকায়, বেগুন (লম্বা) প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, কচু প্রতি কেজি ৮০ টাকায়, জালি প্রতিটি ৬০ টাকা এবং লাউ প্রতিটি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজার করতে এসেছেন এক বেসরকারি চাকরিজীবী তিনি বলেন, প্রায় দুই মাস ধরে বাজারে সবজির অতিরিক্ত দাম চলছে। মাছ-মাংসের পাশাপাশি এখন মনে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা সবজিও খেতে পারবে না।
কী কারণে সবজির দাম এত বেশিÑজানতে চাইলে বিক্রেতারা বারবার শুধু বলেন, বেশিরভাগ সবজিরই এখন মৌসুম শেষ, তাই সরবরাহ কম। কিন্তু দুই মাস ধরেও কি একই রকম অবস্থা চলতে পারে? সবজির মৌসুম তো দুই মাস আগেই শেষ হয়েছে। এখনো কি নতুন সবজি ওঠেনি? এত বেশি দাম হলে তো সাধারণ ক্রেতারা সবজিও কিনতে পারবে না।
রামপুরা বাজারের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজির দাম বাড়ার পর থেকে আমাদের মতো সাধারণ বিক্রেতাদের সবজি বিক্রি অনেক কমে গেছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষ এখন কম পরিমাণে সবজি কিনছে। এ কারণে আগে এক ধরনের সবজি যেখানে ১৫-২০ কেজি করে আনতাম, এখন তা আনি মাত্র পাঁচ কেজি করে। অর্থাৎ মানুষ আগে এক কেজি সবজি কিনলে এখন আধা কেজি কিনছে। সবমিলিয়ে সবজির দাম বাড়ার কারণে আমাদের ব্যবসাও কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের সব ধরনের সবজি সরবরাহ অনেক কম। বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে মূলত বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে, এতে করে সবজি নষ্টও হচ্ছে। নতুনভাবে সবজি বাজারে উঠতে শুরু করলে সবজির দাম কমে আসবে।
সবজির সঙ্গে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ডিমের দামও। আগে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বেড়ে হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাত্র এক মাস আগেও প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।
খিলগাঁও বাজারের এক ডিম বিক্রেতা বলেন, বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে ডিমের দামেও। সবজির দাম বাড়লেই স্বাভাবিকভাবে ডিমের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহে বিঘœ ঘটে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে গরু ও খাসির মাংসের বাজারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মাছের বাজারে নতুন করে দাম না বাড়লেও আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের বাজারে এখনও অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকায়, ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে তিন হাজার টাকায় পর্যন্ত।
অন্যান্য মাছের মধ্যে বোয়াল প্রতি কেজি ৭৫০-৯০০ টাকায়, কোরাল ৮৫০ টাকায়, আইড় ৭০০-৮০০ টাকায়, চাষের রুই ৩৮০-৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৮০-২২০ টাকায়, পাঙাশ ১৮০-২৩০ টাকায়, কৈ ২০০-২২০ টাকায় এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০-৮০০ টাকায়, কাচকি ৬৫০-৭০০ টাকায় এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া কারওয়ান বাজার, রামপুরা, হাতিরপুল ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশ মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০০-৩০০ টাকা। বড়, মাঝারি ও ছোট আকারের ইলিশের দাম বেড়েছে। এসব বাজারে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায়।