বাংলাদেশের সিরামিক খাতের অন্যতম ব্র্যান্ড আরএকে সিরামিকস। দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পের পরিচিতির ক্ষেত্রে আরএকের ভ‚মিকা অপরিসীম। সিরামিক শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার দে’র সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শেয়ার বিজের স্টাফ রিপোর্টার রামিসা রহমান
শেয়ার বিজ: আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পের অন্যতম ব্র্যান্ড। আমরা জানি, আরএকে প্রতিনিয়ত তার পণ্যের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলুন।
সাধন কুমার দে: আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশে সিরামিক শিল্পে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করছে। আমরা নিয়মিত উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন পদ্ধতিও নকশা বাজারে নিয়ে আসছি। এর মধ্যে রয়েছে বিগ সø্যাব প্রেস সিস্টেম, ডিজিটাল প্রিন্টিং, ট্রান্সলুসেন্ট সø্যাব, দ্রবণীয় লবণ এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী গেøজিং প্রযুক্তি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আধুনিক ডিজাইন ও প্রিমিয়াম মানের টাইলস ও সিরামিক পণ্যের মাধ্যমে ঘর, অফিস, হোটেলসহ সব ধরনের নির্মাণে অনুপ্রেরণামূলক অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার জন্য টালইস তৈরি করা।
শেয়ার বিজ: আপনাদের পণ্যের গুণগত মান, বিশেষ করে টাইলসের মান সম্পর্কে বলুন। ভারত ও চীনের সঙ্গে তুলনা করলে আরএকের অবস্থান কোথায় রাখবেন?
সাধন কুমার দে: আমরা বিশ্বমানের টাইলস, স্যানিটারি ও টেবলওয়্যার উৎপাদন করি, যা বিশ্বের অনেক নামকরা স্থাপনায় ব্যবহƒত হচ্ছে। আমাদের বৈচিত্র্যময় পণ্য সম্ভার এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষায়িত নকশা তৈরির সক্ষমতাই আমাদের আলাদা করেছে। গুণমান ও প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা ভারত ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে আছি বরং অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগামীও বলা যায়। বিশ্বব্যাপী আমরা অন্যতম বৃহৎ সিরামিক ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত।
শেয়ার বিজ: টাইলস, স্যানিটারি সিরামিক, কিচেন ওয়্যার, টেবলওয়্যার-দেশের বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
সাধন কুমার দে: বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যারের। দ্রæত নগরায়ণ, অবকাঠামো উন্নয়ন আর মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে এ দুটি পণ্যের ব্যবহার আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে। টেবলওয়্যার ও অন্যান্য সিরামিক পণ্যেরও একটি নির্দিষ্ট বাজার গড়ে উঠছে, বিশেষত তারকা মানের অভিজাত বিলাসবহুল হোটেল ও রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে।
শেয়ার বিজ: বিশ্ববাজারে আপনাদের কোন পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
সাধন কুমার দে: আমাদের ২৪টি অত্যাধুনিক কারখানায় প্রতি বছর প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ বর্গমিটার টাইলস, ৫৭ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার, ৩ কোটি ৬০ লাখ পিস পোর্সেলিন টেবলওয়্যার ও ২৬ লাখ পিস ফসেট উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে টাইলস ও টেবলওয়্যারের চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি।
শেয়ার বিজ: দেশের বাজারে আপনাদের দখলে কত শতাংশ এবং কোন কোন পণ্য সবচেয়ে জনপ্রিয়?
সাধন কুমার দে: আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৮০ শতাংশ দেশীয় বাজারে বিক্রি করি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলো হলো-ডাবল চার্জ সিরিজ, ভিস্তা সিরিজ, অ্যাপোলো সিরিজ, ক্ল্যাসিক সিরিজ এবং বিগ সø্যাব। এগুলোর ডিজাইন, স্থায়িত্ব ও মানের কারণে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করেছে।
শেয়ার বিজ: বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী? এগুলো আপনি কীভাবে মোকাবিলা করছেন?
সাধন কুমার দে: বর্তমানে বাংলাদেশের সিরামিক শিল্প এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে-একদিকে বিপুল সম্ভাবনা, অন্যদিকে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহ, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং কাঁচামালের সরবরাহে অনিশ্চয়তা বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করছি এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
শেয়ার বিজ: আরএকের পণ্য দেশের কোন শ্রেণির মানুষ ব্যবহার করছে?
সাধন কুমার দে: আরএকে আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পরিচিত একটি নাম। আমাদের পণ্য সরকারি প্রকল্প, রিয়েল এস্টেট খাত, প্রাইভেট ডেভেলপার, স্থপতি, ঠিকাদার থেকে শুরু করে সাধারণ গৃহনির্মাতাদের মধ্যে সমানভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অর্থাৎ দেশের প্রায় সব উন্নয়ন সেক্টরেই আরএকের উপস্থিতি রয়েছে।
শেয়ার বিজ: আরএকের আর অ্যান্ডডি বিভাগ এখন কী নিয়ে কাজ করছে? বিশ্বমানের নতুন পণ্য আনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
সাধন কুমার দে: আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ নিয়মিতভাবে নতুন ডিজাইন, পরিবেশবান্ধব গেøজিং প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী ম্যাটেরিয়াল উন্নয়নে কাজ করছে। শিগগিরই আমরা কিছু বিশ্বমানের প্রিমিয়াম সিরামিক কালেকশন ও বড় আকারের ডেকোরেটিভ সø্যাব বাজারে আনতে যাচ্ছি, যা বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার ধারণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post