দেশের সিরামিক শিল্পের বাজার একসময় বিদেশি কোম্পানির দখলে ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সে অবস্থা এখন আর নেই। এই উত্তরণের পেছনে রয়েছে দেশীয় কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরলস প্রচেষ্টা। এর মধ্যে অন্যতম মেঘনা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সিওও এ কে এম জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় শেয়ার বিজের। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনিরুল হক।
শেয়ার বিজ: মেঘনা গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ কেন সিরামিক সেক্টরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিল? বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পে ‘আরবানাইজেশন হ্যাজ জাস্ট স্টারটেড’Ñএই ধারণাটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কেমন প্রভাব ফেলছে?
এ কে এম জিয়াউল ইসলাম: মেঘনা গ্রæপ একটি বিলিয়ন ডলার গ্রæপ অব কোম্পানিজÑযার অধীনে আজ ৫০টিরও বেশি ইউনিট পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের চেয়ারম্যান ও এমডি মোস্তফা কামাল ছোট একটি ট্রেডিং ব্যবসা থেকে আজকের এই বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তার অসাধারণ দূরদৃষ্টি ও সূ² অন্তর্দৃষ্টির কারণেই তিনি অনেক আগেই দেশের ভবিষ্যৎ চাহিদা বুঝতে সক্ষম হন। তারই প্রজ্ঞার ভিত্তিতে ২০১৯ সালে সিরামিক শিল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত হয় এবং আমাদের আনুষ্ঠানিক বাজারযাত্রা শুরু ২০২১ সালে। সে সময় বাজারে বিদেশি টাইলসের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। যদিও এখন তা কমে ১০ শতাংশেরও কম। দেশীয় টাইলসের প্রতি আস্থা ও চাহিদা যে দ্রæত বাড়ছেÑএটা তারই প্রমাণ।
আমরা প্রথমে ৩১ হাজার বর্গমিটার উৎপাদনসক্ষমতা দিয়ে শুরু করি এবং বাজারচাহিদার গতি দেখে তা বাড়িয়ে ৫১ হাজার বর্গমিটারে উন্নীত করি। বর্তমানে বাংলাদেশে ‘আরবানাইজেশন বুমিং’-এর ফল। এর ফলে আবাসন, বাণিজ্যিক নির্মাণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বড় আকারের প্রবৃদ্ধি তৈরি হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, আগামী দশ বছরে শিল্পের চাহিদা কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে।
শেয়ার বিজ: ফ্রেশ সিরামিকস বাজারের অন্য প্রতিযোগীদের থেকে গুণগত মান এবং উৎপাদন খরচের দিক দিয়ে আলাদা কেন?
এ কে এম জিয়াউল ইসলাম: ফ্রেশ সিরামিকসের মূল শক্তি হলো মাননির্ভর উৎপাদন। আমরা কাঁচামাল সংগ্রহ করি স্পেন, থাইল্যান্ড, চীন এবং ভারতসহ বিশ্বের সেরা উৎসগুলো থেকে। রং, পাথর, ফেল্ডস্পারসহ সব গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালই (র’ ম্যাটারিয়াল) আন্তর্জাতিক মানের। আমাদের বৃহত্তম শক্তি, আমাদের দক্ষ বিদেশ-ক্রয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ, যারা সঠিক উৎস, সঠিক মান এবং সঠিক দামে কাঁচামাল নিশ্চিত করে। উৎপাদন, সেলস, মার্কেটিং ও প্রকিউরমেন্টÑসব বিভাগের ঘনিষ্ঠ সমন্বয় আমাদের সামগ্রিক প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করেছে।
উৎপাদনে রয়েছে ইউরোপিয়ান টেকনোলজি, কঠোর কোয়ালিটি কন্ট্রোল, এনার্জিÑএফিশিয়েন্ট সিস্টেম, কস্ট-অপ্টিমাইজড প্রসেস এবং আন্তর্জাতিক ডিজাইন-স্ট্যান্ডার্ড। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণÑবাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাজার-উইনিং তিনটি সাইজের ডাবল চার্জ টাইলস আমরাই এনেছিলাম।
শেয়ার বিজ: ‘এ ফ্রেশ স্টার্ট টু অ্যান এইসথেটিক লাইফ’Ñএই প্রতিজ্ঞা নিয়ে ফ্রেশ সিরামিকস বাজারে এসেছে। এই প্রতিশ্রæতির মাধ্যমে আপনারা কোন ধরনের গ্রাহকদের লক্ষ্য করছেন? আপনাদের বিপণন কৌশল এবং বিতরণ পরিকল্পনা কী?
এ কে এম জিয়াউল ইসলাম: আমরা বিশ্বাস করি নান্দনিক জীবন সবার জন্য। তাই আমাদের গ্রাহককে আমরা তিন স্তরে দেখিÑরিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, খুচরা গ্রাহক ও বাণিজ্যিক/আর্কিটেক্ট পেশাজীবী।
দেশজুড়ে রয়েছে ১২০টিরও বেশি ডিলার নেটওয়ার্ক, ৬৬টি এক্সক্লুসিভ ডিলার শোরুম এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে আমাদের নিজস্ব পরিচালিত বিশ্বমানের ‘হাউস অব এইসথেটিক’Ñএই দুই ডিসপ্লে সেন্টার। ফলে শুধু অভিজাত শ্রেণি নয়, বরং সব আর্থিক শ্রেণি এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। আর এ কারণেই আজ ফ্রেশ সিরামিকসÑ‘বিক্রয়ে দেশসেরা টাইলস ব্র্যান্ড’।
শেয়ার বিজ: রিয়েল এস্টেট সেক্টরে দ্রæত পরিবর্তনশীল ডিজাইন ও স্থায়িত্বের চাহিদা মেটাতে ফ্রেশ সিরামিকস কীভাবে কাজ করছে? নতুন নির্মাণ এবং সংস্কারÑদুই ক্ষেত্রেই আপনাদের মনোযোগ কেমন?
এ এক এম জিয়াউল ইসলাম: ফ্রেশ সিরামিকস শুরু থেকেই দ্রæত পরিবর্তনশীল ডিজাইন ট্রেন্ড ও স্থায়িত্বের প্রয়োজনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক র’ ম্যাটারিয়াল, ইউরোপিয়ান টেকনোলজি ও কঠোর কোয়ালিটি কন্ট্রোল আমাদের মানের ভিত্তি।নতুন নির্মাণ প্রকল্পে আমরা ডেভেলপারদের ডিজাইন-সাপোর্ট ও সময়মতো সাপ্লাই দিচ্ছি; আর সংস্কার প্রকল্পে দ্রæত ডেলিভারি ও সহজ ইনস্টলেশনের সুবিধা দিচ্ছি এবং সামনে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আমরা বিশ্বমানের স্যানিটারিওয়্যার আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শেয়ার বিজ: বর্তমানে কোন ধরনের পণ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি? ভবিষ্যতের জন্য পণ্যপরিসরে নতুন কী ধরনের উদ্ভাবন বা বৈচিত্র্য আনার পরিকল্পনা রয়েছে?
এ কে এম জিয়াউল ইসলাম: আমাদের সব ধরনের পণ্যেরই বাজারে শক্তিশালী চাহিদা আছে। আমরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে দেশেই সেই মানের টাইলস তৈরির চেষ্টা করছি, যা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের কিছু পণ্য ইতোমধ্যে রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে বর্তমানে বড় সø্যাব টাইলসের চাহিদা দ্রæত বাড়ছে। ভবিষ্যতে আমরা এই সেগমেন্টে সম্পূর্ণ স্থানীয় উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছি।
আমাদের লক্ষ্যÑশুধু টাইলস নয়, বরং সম্পূর্ণ হোম-সল্যুশন ব্র্যান্ড হিসেবে আরও উদ্ভাবনী ও বৈচিত্র্যময় পণ্যের পরিসর তৈরি করা।
শেয়ার বিজ: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
এ কে এম জিয়াউল ইসলাম: ধন্যবাদ। বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পকে আরও শক্তিশালী ও বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। মানুষ আমাদের পাশে আছে বলেই এই যাত্রা আরও অনুপ্রাণিত হয়।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post