নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্ধারিত সময় শেষ হলেও ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ ধরে রেখেছিল অগ্রণী ব্যাংক, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের লঙ্ঘন। এ কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিমানার মুখে পড়ে অগ্রণী ব্যাংক।
জানা গেছে, বিক্রয়যোগ্য ১১টি ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে রেখেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। এর মধ্যে ছয়টি সম্পদ ধরে রাখায় ব্যাংকটিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাকি পাঁচটি নন-ব্যাংকিং সম্পদের মধ্যে তিনটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে; একটি ইতোমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে, আরেকটি ব্যাংক ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই গ্রাহকের বন্ধকি সম্পত্তি ব্যাংকের মালিকানায় নিতে পারে। এ ধরনের সম্পদ ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের কাছে এ ধরনের জামানত বা সম্পদ থাকলে তা সাত বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিতে হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে তা আরও পাঁচ বছর ধারণ করার সুযোগ রয়েছে।
এমন অগ্রণী ব্যাংকের ১১টি ‘নন-ব্যাংকিং‘ সম্পদ দীর্ঘদিন ধরে রাখার তথ্য সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে আসে। এর মধ্যে ছয়টি ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদের ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের মেসার্স অঙ্গীকার, বগুড়ার মেসার্স বিকন ট্রেড এন্টারপ্রাইজ, দিনাজপুরের পুরোনো বাজার শাখার ঋণগ্রহীতা মো. আলতাফ হোসেন, জয়পুরহাটের জয়পুরহাট শাখার মেসার্স উত্তরা মোটরস অ্যান্ড ফাউন্ড্রিজ, ঢাকার জিনজিরার মেসার্স বেদের হোসেন ও ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখার নাইট ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সম্পদ ধারণের জন্য জরিমানা হয় অগ্রণীর।
অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. আনোয়ারুল ইসলাম জরিমানার বিষয়ে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ছিল সম্পদগুলো। এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি সিইও হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি ২০২৪ সালের নভেম্বরে।’
তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনেও উঠে এসেছে। তাই আইন মোতাবেক এখন যা যা করার দরকার, আমরা তাই করব। আইন অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই। এসব নন-ব্যাংকিং সম্পদ বিক্রি করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তা দ্রুতই করা হবে বলে আমি আশা করি।’
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, খেলাপি গ্রাহকদের জামানতের বিপরীতে পাওয়া সম্পদ কোনো কারণে বিক্রি করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হয়। তবে অগ্রণী ব্যাংক এই ছয়টি নন-ব্যাংকিং সম্পদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবগত করেনি। সম্পদগুলো ১১ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত নিজেদের কাছে রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক। ছয়টি সম্পত্তির মধ্যে দুটি ২০১২ সাল থেকে, একটি ২০০৭ সাল থেকে এবং বাকি তিনটি ২০১৩ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংকের অধীনে রয়েছে।
বিষয়টি নজরে এলে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে অগ্রণী ব্যাংক পর্যাপ্ত দর না পাওয়ার মতো কারণ দেখায়। ব্যাংকটির ঋণ অনুমোদনকালে জামানত প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকার কারণে এমন সমস্যা হয়েছে বলে জানায় অগ্রণী ব্যাংক।
অগ্রণী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এসব নন-ব্যাংকিং সম্পত্তি ব্যাংকের হাতে আছে। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হওয়ায় ওই বিভাগের কর্মকর্তারা বারবার বদলি হয়েছেন। অনেকটা অবহেলা করেই ফেলে রাখা হয়েছে এসব সম্পদ বিক্রির কাজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ দেয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বন্ধকি সম্পদের বাজার মূল্যায়ন সঠিকভাবে করতে পারেনি বলে কেন্দ ীয় ব্যাংকের কাছে প্রতীয়মান হয়। এটা ইচ্ছাকৃত না ভুল করে হয়েছে তা বলা কঠিন।
অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, সম্পদের দামে হেরফের রয়েছে। বন্ধক রাখার সময় সম্পদের মূল্য যা দেখানো হয়েছে, সেটা প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। এ কারণে সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না অগ্রণী ব্যাংক।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী এক বছরের মধ্যে এসব সম্পত্তি বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংককে। এক বছরের মধ্যে এসব সম্পত্তি বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী অগ্রণী ব্যাংককে প্রতিদিনের জন্য পাঁচ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আইন অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক খেলাপি হলে পড়লে ঋণদাতা ব্যাংক জামানতের সম্পদের মালিকানা পাওয়ার জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করেন। অর্থঋণ আদালত আইনের ৩৩ ধারা অনুযায়ী গ্রাহকের জামানতকৃত সম্পদ ব্যাংকের নামে ডিক্রি করে নিতে পারে। সম্পদের মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয়ে নামজারির আবেদন করতে হয়। কারণ অর্থঋণ আদালত জামানতের সম্পদের অধিকার দিলেও নামজারির আগ পর্যন্ত সম্পদটি গ্রাহকের নামেই রয়ে যায়। তাই এ সম্পদ ব্যাংকের নামে নেয়ার জন্য নামজারির এই মামলা করা হয়। তারপর ব্যাংক এ সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে আসে এবং ব্যাংকটির ‘নন-ব্যাংকিং’ সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়। তবে এ সম্পদ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে ঋণের টাকা সমন্বয় করে থাকে।

Discussion about this post