নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারকে পুঁজিবাদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে আখ্যা দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন সেগুলো সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। তবে সময় লাগছে। কারণ অনিয়মের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গতকাল মঙ্গলবার তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি লিস্টিংয়ের কাজ স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আইপিও প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার অবসান হতে হবে। তিনি বলেন, গত এক বছরে কোনো আইপিও আসেনি। এই আইপিও আনা বিএসইসির কাজ নয়, এ দায়িত্ব মার্চেন্ট ব্যাংকারদের। ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক গত ১৫ বছরে ১৩৮ কোম্পানি শেয়ারবাজারে এনেছে। এক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স কোথায়?
এ সময় তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আইপিওতে আসা কিছু কোম্পানির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে সব কোম্পানির দর বাড়বে, এটা ভাবাও ঠিক নয়।
মমিনুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার পুঁজিবাজার। গত ১৫ বছরে আমাদের পুঁজিবাজারে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন সেগুলো সমাধানে কাজ করা হচ্ছে, তবে সময় লাগছে। কারণ অনিয়ম ছিল ভয়াবহ।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, এবারের বাজেটে সরকার পুঁজিবাজারে যেসব ইনসেনটিভ দিয়েছে, তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এ সরকার পুঁজিবাজারকে যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, তা এর আগে দেখা যায়নি। তবে সরকার চাইলে মার্কেট মেকারের ভূমিকায় কাজ করতে পারে। যেমন রাষ্ট্রীয় মালিকানা রয়েছে, এমন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে ছয় মাসের মধ্যে শেয়ার ছেড়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমান, সাধারণ বীমা, জীবন বীমা-এসব কোম্পানিকে কীভাবে পুঁজিবাজারে আনা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে পারে। এ ছাড়া সড়ক, ফ্লাইওভার, ব্রিজ ও এক্সপ্রেসওয়ের টোল কালেকশন ডিজিটালাইজড এবং সিকিউরিটাইজ করে কীভাবে ফান্ড সংগ্রহ করা যায়, সেই বিষয়ে সরকার ভাবতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অডিটার ও ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি তারা তাদের রেসপন্সিবিলিটিটা ঠিকমতো পালন করতে না পারার ফলে খারাপ আইপিও মার্কেটে চলে এসেছে। এখন আর ভালো কোম্পানি আসতে চাচ্ছে না। সাড়ে সাত শতাংশ ট্যাক্স গ্যাপ থাকার পরও কেন ভালো কোম্পানি মার্কেটে আসতে চাচ্ছে না? কারণ হচ্ছে, অনেক কোম্পানি স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট তৈরি করছে না, স্বচ্ছতার সঙ্গে আয়কর দিচ্ছে না অথবা দিতে পারছে না। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে স্বচ্ছতার সঙ্গে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, কোনো কোম্পানি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুঁজিবাজারে আসবে না। বাজারে আসার ঝুঁকি এবং প্রণোদনা বিশ্লেষণ করে তা লাভজনক মনে করলেই কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইপিও অনুমোদন পেতে দু-তিন বছর সময় লাগে, কিন্তু ভারতে লাগে ছয় মাস। তাই আমাদের আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করে সময় কমিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী, অর্থ) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে আইসিবির এমডি নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিএসই চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আরও বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ কুতুব, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজার ডেস্কের পরিচালক ইস্তেকবাল, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হাফিজ প্রমুখ।
এদিকে গত সোমবার দেশের পুঁজিবাজারে দারুণ ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘ ১১ মাস পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্সে একটি উল্লেখযোগ্য উত্থান পরিলক্ষিত হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। গত সোমবার ডিএসইএক্স ৮২ পয়েন্টের বেশি বেড়ে লেনদেন হয়েছিল। এই উত্থানকে বাজারসংশ্লিষ্টরা একটি বড় চমক হিসেবে দেখছেন।
২০২৪ সালে ৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ডিএসই সূচকে দুটি উল্লেখযোগ্য উত্থান দেখা গিয়েছিল। পরদিন ৮ আগস্ট ডিএসইএক্স সূচক ৩০৬ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হয়, যা ২০১৩ সালে সূচকটি চালু হওয়ার পর একক দিনে সর্বোচ্চ উত্থান। তিন দিন পর ১১ আগস্ট সূচক আরও ৯১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। তারপর থেকে ডিএসই সূচকে এমন বড় অঙ্কের উত্থান আর দেখা যায়নি। দীর্ঘ ১১ মাস পর গত সোমবার আবার পুঁজিবাজারে এই ধরনের একটি বড় উত্থান দেখা গেল, যা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করছে। অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার ডিএসইতে মোট ৬০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

Discussion about this post