নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : একজন উদ্যোক্তাকে এখন থেকে চট্টগ্রাম চেম্বারে সদস্য হতে ১৫ হাজার টাকা আর নবায়ন ফি পাঁচ হাজার টাকা লাগবে, যেক্ষেত্রে আগে অরডিনারি ও অ্যাসোসিয়েট সদস্য হতে লাগত এক হাজার ৬০০ টাকা ও ৮০০ টাকা। আর নবায়ন ৮০০ টাকা ও ৪০০ টাকা। র্আৎ আগের তুলনায় উদ্যোক্তাদের সদস্যপদ নিতে লাগবে সাড়ে ১৮ গুণেরও বেশি, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য পীড়াদায়ক।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত বাণিজ্যিক সংগঠনগুলোকে একই আইনে নিয়মের মধ্যে আনতে সম্প্রতি বিধিমালায় পরিবর্তন আনে সরকার, যা বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫ নামে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ২৫ মে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয় এই বিধিমালা। তবে নতুন এই বিধিমালা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশে ব্যবসায়ীরা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। নতুন এই বিধিমালায় এবার বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সদস্য হওয়ার জন্য নিবন্ধন ফি ও নবায়ন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যা আগের বিধিমালায় ফি নির্ধারণ ও ফি প্রদানের কথা থাকলেও কোনো নির্দিষ্ট করে ফি নির্ধারণ করা ছিল না। তাই সংগঠনগুলো তারে সস্যের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ফি নির্ধারণ করত। তবে এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেই ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
নতুন প্রকাশিত সবাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫-এর ধারা ১৪-তে বাণিজ্য সংগঠনের শ্রেণিবিন্যাস, চাঁদার হার ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কোনো বাণিজ্যিক সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ৫০০-এর অধিক হলে ‘ক’ শ্রেণি এবং ৫০০-এর কম হলে ‘খ’ শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে ‘ক’ শ্রেণির সংগঠনের নতুন সদস্য নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা এবং বার্ষিক নবায়ন ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে ‘খ’ শ্রেণির সংগঠনের নতুন সদস্য নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা ও বার্ষিক নবায়ন ফি তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সংগঠনগুলোর সাধারণ ও অ্যাসোসিয়েট উভয় সদস্যদের জন্য একই ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে সদ্য প্রকাশিত ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫’ অনুযায়ী নতুন হারে অর্থ জমা করে সদস্যপদ নবায়নের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরে অন্যতম বৃহৎ সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। গত শনিবার সংগঠনটির প্রশাসক মুহাম্ম আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৫-২৬-এর জন্য ফি জমা করে সদস্যপদ নবায়নের জন্য বলা হয়েছে, যা ১ জুলাই থেকে শুরু হবে।
এদিকে নতুন বর্ধিত ফি’র নিন্দা জানিয়ে চিটাগাং ফ্রেশ ফুডস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট মাহবুব রানা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এভাবে সদস্য ফি নির্ধারণ করে ওেয়াটা বাবসায়ীবান্ধব হয়নি। কারণ সারা দেশের সব ব্যবসায়ী একই রকম ব্যবসা করে না। আবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো চেম্বারগুলোয় অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের জন্য ১৫ হাজার টাকা সদস্য ফি প্রদান চাপ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া বার্ষিক নবায়ন ফিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যা ছোট ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ সৃষ্টি করবে। যেহেতু এখন ব্যবসা মন্দা চলছে, তাই হয়তো অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যবসায়ী তার সদস্যপদ নবায়ন নাও করতে পারে। আবার নতুন কোনো ব্যবসায়ীর সদস্য হওয়ার ইচ্ছা থাকলে উচ্চ হারের সদস্য নিবন্ধন ফি দেখে পিছিয়ে যেতে পারে। এই শঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে রাশেদুল ইসলাম নামের একজন তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, আমরা সবে আমদানি ব্যবসায় আগ্রহী হয়েছি। এর মধ্যে আমদানি অনুমতিপত্র নিতে ও চেম্বার সদস্যপদ নিতে ১৫ হাজার টাকা লাগবে, যা একজন সাধারণ উদ্যোক্তার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। এটি আরও সহনীয় করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিবেচনা করা উচিত।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের কর্মকর্তারা বলেন, সদস্য পদের ফি বাড়ানোতে চট্টগ্রাম চেম্বারের কোনো ভূমিকা নেই। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এটি গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বাংলাদেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। এটি চট্টগ্রামের ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, উৎপাদন প্রভৃতির সঙ্গে জড়িত ফার্ম, কোম্পানি এবং করপোরেট সংস্থা নিয়ে গঠিত। এটি ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার নাম ছিল চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স। প্রাথমিক পর্যায়ে চেম্বারের কার্যক্রম এবং এর সদস্যসংখ্যা সীমিত ছিল। এর কোনো কার্যালয় ছিল না, তবে অফিশিয়াল কার্যক্রম, যেমন সভা এমনকি সাধারণ সভাও সভাপতির (সিসিআই) বাসভবন বা ব্যক্তিগত অফিসে এবং চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের অন্য কোনো প্রভাবশালী সদস্যের বাসায় করা হতো। সূচনা থেকে ভারত বিভক্তি পর্যন্ত চেম্বারটি ইউরোপীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষ করে চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল ইউরোপীয়দের হাতে। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স ছাড়াও ভারত বিভাগের আগে চট্টগ্রামে এরকম আরও অনেক সংগঠন কাজ করত। তারা ছিল ইন্ডিয়ান মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, মুসলিম চেম্বার অব কমার্স, ইস্ট বেঙ্গল চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স।
পলিসি অ্যাডভোকেসি: পলিসি অ্যাডভোকেসি চেম্বারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি কার্যকরভাবে সম্পাদন করার জন্য বর্তমানে ২১টি বিভিন্ন উপ-কমিটি রয়েছে।
এই উপ-কমিটির সাহায্যে চেম্বার দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বিনিয়োগ ও সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে এমন বিভিন্ন নীতি ও বিষয়ে পরামর্শ ও সুপারিশ তৈরি করে এবং সেগুলো সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়।

Discussion about this post