শেয়ার বিজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এক দিনে কমপক্ষে আরও ৯৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাড়ে তিন শতাধিক।
গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
এতে করে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ৭০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বার্তা সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলের টানা হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৬৭৭ জনে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৯৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৩৬৭ জন আহত হয়েছেন। এতে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জনে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, বহু মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন বা রাস্তায় পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না, ফলে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কেবল মানবিক সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৩২ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গত ২৭ মে থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনায় মোট ৮৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ৫ হাজার ৬৬৬ জন।
অন্যদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়েই যাচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষের দিকে যখন জিএইচএফ কাজ শুরু করে, তখন থেকে গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় ৯০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক উঠেছে। সেখানে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের পশুর মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজার ১৬টি এলাকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির আদেশও জারি করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাবালিয়া। বিধ্বস্ত ওই শহরের বাসিন্দারা ভয় ও আতঙ্কে পালিয়ে যাচ্ছে।
লোকজন তাদের গাড়ি ও গাধাকে ব্যবহার করে এলাকা খালি করছে। সবাই অজানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; তারা জানে না কোথায় যাবে। যাতায়াতের জন্য জ্বালানি না থাকায় তাদের এক স্থান থেকে অন্যান্য স্থানে যেতেও সমস্যাও হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি খুবই বিশৃঙ্খল। এখানে বসবাসকারী সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পরই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েল হামলা চালায়নি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বল্প সময়ের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল আবারও পূর্ণ মাত্রায় হামলা শুরু করে। এর পর থেকে গত চার মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজায় ৭ হাজার ৮৪৩ জন নিহত এবং প্রায় ২৭ হাজার ৯২২ জন আহত হয়েছেন।
গত বছরের নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এ ছাড়া গাজায় চলমান সামরিক অভিযানকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) মামলা চলছে।

Discussion about this post