দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানটি মূলত কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নে ঋণ প্রদান, কারিগরি সহায়তা এবং অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করে। এ লক্ষ্যে রাকাব কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে, যা তাদের কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা, সার ও বীজ সংগ্রহ এবং উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদে সহায়তা করে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) এবং কুটির শিল্পের জন্য ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া রাকাব কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেয়, যা তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
১৯৮৭ সালে গঠিত রাকাব রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কৃষিঋণ সরবরাহকারী বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দুর্ভাগ্যজনক হলো দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাংকটি বারবার গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনাম হয়। কখনও নিরীক্ষায় শত শত কোটি টাকার হিসাবে গোঁজামিল পাওয়া যায়, কখনও রাকাবের প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে বিভিন্ন শাখার সমন্বয়হীনতাও রয়েছে।
যেমন—সর্বশেষ গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে ‘আর্থিক সংকট-দুর্নীতিতে বেহাল রাকাব: ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক, ঝুলে আছে একীভূতকরণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন। যখন সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গতি আসছে তখন ব্যাংকটির অব্যবস্থাপনায় সাধারণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটি দুঃখজনক। অথচ একসময় কৃষকের আস্থা ও আশা-ভরসার বড় অবলম্বন ছিল রাকাব। বর্তমানে ব্যাংকটি চরম আর্থিক সংকট, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাংকটির হাজার হাজার কৃষিনির্ভর গ্রাহক ঋণ না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এই ব্যাংকের একীভূতকরণেরও উদ্যোগও ঝুলে রয়েছে। তবে সেই উদ্যোগটি নিয়েও এখন আর কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, একীভূতকরণ তখনই কার্যকর, যখন ভেতরের দুর্নীতি ও কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে তার সমাধান করা হয়। রাকাবের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। বরং সমস্যা চাপা দিতে গিয়ে অন্য ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতাও ঝুঁকিতে পড়বে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাকাবের আর্থিক প্রতিবেদন, সরকারি অডিট রিপোর্ট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করেও ব্যাংকটি গুরুতর আর্থিক ও ব্যবস্থাপনা সংকটের কথা জানা যায়। ঋণখেলাপি বৃদ্ধি, মূলধন ঘাটতি, দুর্নীতি ও তহবিল সংকটের কারণে ব্যাংকটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে রয়েছে। সংকট মোকাবিলায় দ্রুত, স্বচ্ছ এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নয়তো উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য রাকাবের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এদিকে ব্যাংকটির একীভূতকরণ প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। রাকাবের সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে একীভূতকরণের বিরোধিতা করছেন। তাদের দাবি, ‘রাকাব শুধু ব্যাংক নয়, একটি অঞ্চলভিত্তিক কৃষি উন্নয়ন কাঠামোও বটে। সরকারের উচিত একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে রাকাবের দুর্নীতি, অনিয়ম ও কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধান নিশ্চিত করা।’

Discussion about this post