আলী হাসান : সমাজে মধ্যবিত্ত বলতে সাধারণত সেই শ্রেণির মানুষকে বোঝায়, যাদের আয়, শিক্ষা, পেশা, এবং জীবনযাত্রার মান সমাজের নিম্নবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংজ্ঞা নির্ভর করে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ের ওপর। এদের আয় সাধারণত নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা (যেমন- খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য) পূরণের জন্য যথেষ্ট হয়, তবে তাদের বিলাসিতা বা অতিরিক্ত ব্যয়ের সামর্থ্য সীমিত থাকে। অনেক সময় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে গিয়ে আনন্দ বা বিলাসিতাকে তাদের ত্যাগ করতে হয়।
আমাদের দেশে মধ্যবিত্তদের মাসিক আয় সাধারণত ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়। আর তাদের বেশিরভাগই হয়তো চাকরিজীবী নয়তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান যারা থাকেন তাদেরকে হয়তো প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের মুখে কিভাবে খাবার তুলে দেবেন সে চিন্তা করতে হয় না। কিন্তু তারা মাসের শেষের দিকে খালি পকেটের কথা চিন্তা করে মাসের শুরু থেকেই হিসেব করে চলা শুরু করে। তবুও কেমন করে যেন মাসের শেষে সংসারের বাজেটে টান পড়েই যায়। এটাই মধ্যবিত্ত পরিবারের বাস্তব চিত্র।
মধ্যবিত্তরা শহর বা শহরতলিতে ভাড়া বাসায় বা নিজস্ব মাঝারি আকারের বাসস্থানে থাকেন। তারা মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কিছুটা বিনোদনের জন্য ব্যয় করতে পছন্দ করেন। তবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক চাপ তাদের জীবনযাত্রাকে বাজেভাবে প্রভাবিত করছে।
উদাহরণস্বরূপ একজন বেসরকারি স্কুল শিক্ষক, যিনি মাসিক ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন, বাসাভাড়া দিয়ে সন্তানদের স্কুলের বেতন দিয়ে মাস শেষে সঞ্চয়ের জন্য সামান্য টাকা রাখতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বেতনে পরিবারের খরচ চালানোই দায় হয়ে পড়েছে সঞ্চয় করা তো তার জন্য এখন বিলাসিতা।
মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যারা অর্থনীতি ও সংস্কৃতির চালিকাশক্তি হিসেবে যেমন কাজ করে। তেমন আবার সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির যাতাকলেও তারা পিশতে থাকে। কেননা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধনী এবং গরিব শ্রেণির মানুষদের নিয়ে কথা বলা হলেও মধ্যবিত্তদের কথা না বলাই থেকে যায়। দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য সরকার প্রদত্ত নামকাওয়াস্তে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও মধ্যবিত্তদের জন্য এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তারা মান সম্মান রক্ষার্থে নিজের দুঃখ দুর্দশার কথা সমাজের সামনে উপস্থাপন করতে ভয় পায়। ফলস্বরূপ তাদের ব্যথাতুর আর্তনাদ তাদের বাড়ির চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। দ্রব্যমূল্যের এই ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক চাপ তাদের জীবনযাত্রাকে ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতম করে তুলছে।
মধ্যবিত্তদের আয় সাধারণত স্থির বা ধীরে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- চাল, ডাল, তেল, শাকসবজি এবং জ্বালানির দাম দ্রুত বাড়ছে। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং মৌলিক চাহিদা পূরণ করাই কঠিন হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারেই সঞ্চয় প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের মাসিক বাজেটে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যার ফলে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে বা সঞ্চয় একেবারেই কমে যাচ্ছে।
অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার আবার দৈনন্দিন খরচ মেটাতে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলছে। দিনদিন তারা মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি অনেকে গরিব শ্রেণির দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি যেন কোনোভাবেই না থামার পন করেছে। দেশের সরকার পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি দেশের সাধারণ মানুষের জীবন ব্যবস্থা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বলতে বুঝানো হয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। আর এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কালস্বরূপ।
কয়েক বছরের তুলনায় ২০২৫ সালে দ্রব্যমূল্যের দামের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান (যেমন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) এর মতে গত কয়েকবছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যাদির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর প্রথমটি হচ্ছে খাদ্য। যদি কোনো জাতিকে সেই মৌলিক অধিকারটি ভোগ করার জন্যই রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয় তবে সেই জাতিকে অদৌ কি উন্নয়নশীল জাতি বলা যায়?
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নিত হওয়ার পরেও বাংলাদেশে এখনও রয়ে গেছে আমাদের খাদ্যের জন্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের সংগ্রামের চিত্র। আর এই সংগ্রামের কারণ হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি। কারণ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লেও বাড়ছে না সাধারণ মানুষের আয় ফলস্বরূপ গরিব এবং মধ্যবিত্ত মানুষদের জীবন দিন দিন হয়ে পড়ছে দুর্বিষহ।
গত ১৫ বছরে একজন চাকরিজীবীর বেতন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে যেখানে তার জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার কথা সেখানে তার অবস্থা আরও খারাপ। কেননা বেতন ১০ টাকা বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে ২০ টাকা। এক্ষেত্রে মানুষ খাবেই বা কি আর ভবিষ্যতের জন্য জমাবেই বা কি!
দ্রব্যমূল্যে ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে এমন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ যতটা না ভুগছে তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি আছেন স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।
একজন গৃহ পরিচারিকা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, বাজারে গেলে ৫০০ টাকা নিয়ে গেসি, ঠিকমতো তিন বেলার বাজার করতে পারিনি। বাচ্চা মাছ মাংস খাইতে চায়, দিতে পারি না। সরকার তো বড়লোকের জন্য, আমাদের জন্য না।’
এমন বহু মানুষ রয়েছেন যারা এই ব্যাপারে সরকারের উদাসীনতার শিকার হয়ে আসছেন। জনগনের দুঃখ-দুর্দশা মিটানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই জনগণের প্রতি যেন এক রকমের উদাসীন হয়ে যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিবার নির্বাচনী ইশতেহারে জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অঙ্গীকার করা হলেও এই দেড় দশকের শাসনামলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।
কিন্তু বাড়েনি মানুষের আয়, ফলস্বরূপ পণ্যের দামের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাধারণ মানুষের হাহাকার।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট এবং বাজারে অপর্যাপ্ত মনিটরিং এছাড়াও উচ্চপদস্থ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ওপরে ছিল, এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২০২৩-এ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে পৌঁছেছিল। সরকার তখন টিসিবি’র মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিতরণ, আমদানি শুল্ক কমানো এবং মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করেছিল। তবে টিসিবির পণ্য নিয়েও দুর্নীতি শুরু হওয়ায় সেসব পণ্য আর সাধারণ মানুষের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। টিসিবির চাল, ডাল গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের বাড়িতে না গিয়ে যায় দুর্নীতিবাজ ধনীদের বাড়িতে। ফলস্বরূপ গরিব আর মধ্যবিত্তরা হয় পুনরায় দুর্নীতির শিকার।
অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেছেন, টাকার অবমূল্যায়ন এবং আমদানি শুল্ক সঠিক সময়ে সমন্বয় না করায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এছাড়া তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা ছিল।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যার আঘাত আমাদের দেশে খুব একটা অনিয়মিত নয়। আর এই বন্যার জন্য প্রতিবার আমাদের কৃষিজাত পণ্যের ব্যপক ক্ষতিসাধন হয়। প্রতিবার বন্যার পরেই দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে।
এছাড়াও কৃষক পর্যায় থেকে পণ্য ভোক্তা পর্যন্ত আসতে আসতে কয়েক দফা হাত বদল হয়। যার ফলে সেখানেই দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
কৃষক এত পরিশ্রম করে শস্য উৎপাদন করার পরেও অসাধু মধ্যস্বত্ব্ব ভোগকারীদের জন্য লাভবান হতে পারছে না। এছাড়াও সেচব্যবস্থা এবং কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি ও পণ্য পরিবহনজনিত জটিলতা দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা পালন করে।
বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করছেন এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা অথবা জেল সাজা দিচ্ছেন। বাজার সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখে বর্তমান সরকার টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে (১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ)।
তবুও সরকারের এসব পদক্ষেপ ও যেন কোনোভাবেই জনগণের দুর্দশা গোছাতে পারছে না। ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বাংলার এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করছে অথবা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে।
জরিপে দেখা গেছে, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, চাল, মাছ, সবজি, ডিম, মাংস, তেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে খারাপ করেছে। এক-চতুর্থাংশের কম উত্তরদাতা (২৩ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের তুলনায় ভালো করছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা (৩০ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন, পরিস্থিতি আগে যা ছিল, তা-ই আছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পতনের ফলে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাও প্রভাবিত হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বড় এলাকাজুড়ে পরপর দুটো বন্যা হয়েছে। যার ফলে চালের উৎপাদন, বিশেষ করে আমন ও অন্যান্য শাকসবজির উৎপাদনের ওপর চাপ পড়েছে।
নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর তারা মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন— চাল, আলু, চিনি, তেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির ওপর আমদানি কর কমানো হয়েছে। বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্রের (এলসি) মার্জিন ১০০ ভাগ থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে, যাতে আমদানিকারকেরা সহজে আমদানি করতে পারেন। এসব পদক্ষেপ হয়তো মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত মানুষদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সহজলভ্য করবে। তবে বর্তমান সরকারের আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত যেমন: আমদানি বন্ধের দোহাই দিয়ে আমদানিকারকরা এবং পাইকারি বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে বাজারে পণ্য দ্রব্যের সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বলে সাধারণ মানুষের অভিমত রয়েছে।
সঠিকভাবে অনুসন্ধানের পর দেখা যায় এই ধারণা একেবারেই অমূলক নয়। সরকারের উচিত টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নজরদারি নিশ্চিত করে এর একটা বিহিত করা।
একজন আমদানিকারক, পাইকারি বিক্রেতা অথবা খুচরা বিক্রেতা প্রতিটি দ্রব্য পণ্যে ক্রয়মূল্যের কত পার্সেন্ট লাভ করতে পারবে তার নীতিমালা নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।
এই নীতিমালা নির্ধারণ করা গেলে ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় নৈতিকতা থেকে সরে গিয়ে ক্রয়মূল্য থেকে অতিরিক্তি বেশি পরিমানে বিক্রয়মূল্য ধার্য করতে পারবে না।
শুধু নিয়ম বেঁধে দিলেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়, নীতিমালা নির্ধারণের পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োগ এবং নিয়মিত তদারকির পদক্ষেপ নিলেই এর সুফল ভোগ করতে পারবে সাধারণ মানুষ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হলে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের এই বাড়তি দাম যদি সরবরাহ সমস্যার সমধানের পরেও না কমে, তবে সেটা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলে ধরে নেয়া যায়। ব্যবসার ক্ষেত্রে এ অনৈতিক বিষয়টি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজন সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ।
নৈতিকতার প্রয়োজন শুধু দেশের বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং বৈদেশিক বাণিজ্য বা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাণিজ্যিক সম্পর্কে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশগুলো ওই পণ্য উৎপাদনে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে বিশেষ ছাড় দিয়ে সে পণ্য রপ্তানি করে থাকে। এতে করে পিছিয়ে পড়া দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এ ভারসাম্য রক্ষা হওয়া খুবই জরুরি। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এ ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলে দুই দেশের সরকার এবং জনগণ উভয়ই এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির জন্য সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস ওঠে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এসব দুর্ভোগ দূর করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দুর্নীতির কালো চাদরে সেসব ঢাকা পরে গিয়েছিল।
সরকার শুধু ধনীদের স্বার্থে কাজ করে না বরং সরকার মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের জন্যও কাজ করে, এখনই সময় এই কথা বাস্তবায়ন করার। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য আজ পর্যন্ত যতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা দুর্নীতিবাজদের কারনে তাদের দুর্দশা না গুচিয়ে বরং ধনীদের অবস্থার উন্নতি করে এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের দুর্দশা দূরীকরণের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভবপর হলে দেশে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে।
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Discussion about this post