শেয়ার বিজ ডেস্ক : চলতি বছরের গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাশে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৬০ শতাংশ বেশি। অন্যেিক, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মোট পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৭.০৬ শতাংশ, যার পরিমাণ ৩১.৭০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধির বিপরীতে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি ১০.০২ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে ভারত ১৬.৯৬ শতাংশ, পাকিস্তান ২১.৫৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১৬.৩৩ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১৩.৫৫ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া ১৭.৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তবে ইউনিটপ্রতি মূল্যের দিক দিয়ে বাংলাশে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি। বাংলাদেশের ইউনিট মূল্য বেড়েছে মাত্র ০.৪৭ শতাংশ। বিপরীতে ভিয়েতনাম ৩.৪৭ শতাংশ ইউনিট মূল্যে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে। চীন ০.৯৩ শতাংশ, পাকিস্তান ৩.২৪ শতাংশ এবং কম্বোডিয়া ৪.১৯ শতাংশ হারে ইউনিট মূল্যে পিছিয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, রপ্তানির পরিমাণ ও মূল্য বৃদ্ধি অবশ্যই ইতিবাচক খবর। তবে ইউনিট মূল্যে স্থবিরতা বা পতন আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। ক্রেতারা এখনও দামে বেশ সংবেদনশীল এবং মূল্য প্রতিযোগিতার কারণে আমরা অধিকাংশ সময়েই ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারছি না। ভিয়েতনাম যেভাবে ইউনিট মূল্যে এগিয়ে আছে, তা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। বাংলাদেশকে এখন শুধু পরিমাণ নয়, মান ও মূল্য সংযোজনেও আরও মনোযোগী হতে হবে, না হলে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।
‘আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্য এবং কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ধরে রেখেই রপ্তানি বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। কারণ আমাদের উৎপাদন দক্ষতা, পরিবেশবান্ধব কারখানা এবং সময়মতো ডেলিভারির ফলে ক্রেতারা আমারে প্রতি আস্থা রেখেছে’,বলে মন্তব্য করেন স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালে।
তিনি বলেন, আমরা এখন অ্যাক্টিভওয়্যার, স্পোর্টসওয়্যার এবং আউটারওয়্যারের মতো নতুন ধরনের পণ্যে দক্ষতা অর্জন করেছি। বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রযুক্তি গ্রহণে বিনিয়োগ বাড়ানো। শুধু আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা নয়, সেই সঙ্গে আমাদের শ্রমিকরে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চমূল্যের পণ্যে রপ্তানি সক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকে আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমাতে লবিস্ট নিয়োগের চেষ্টা শুরু করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে এ চেষ্টায় এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।
মাহমুদ হাসান খান গণমাধ্যমকে জানান, গত শনিবার থেকে বিজিএমইএ লবিস্ট নিয়োগে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তবে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ, ‘অধিকাংশ লবিস্ট ইতোমধ্যেই অন্য দেশের পক্ষে কাজ করছে।’ এমনকি সংগঠনের অনেক পরিচালকও এখন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে নিরুৎসাহিত করছেন, ব্যর্থতার আশঙ্কায়।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘আমরা যদি এক মাস আগেই জানতাম যে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (টঝঞজ) নয়, বরং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্প প্রশাসনের, তাহলে লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তুতি আগেই শুরু করতে পারতাম।’
তিনি পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, বিজিএমইএর ১,৩২২টি সদস্য কারখানার মধ্যে ১০০টি কারখানা তাদের রপ্তানির ৯১-১০০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে করে। তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ মার্জিনে ব্যবসা করি। এখন ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক এলে সেটা কঠিন হয়ে যাবে।’
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘আমরা দেরিতে হলেও লবিস্ট খুঁজছি। পিআরআইয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে দুজন লবিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, এর মধ্যে একজন ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।’
সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার কখনোই বেসরকারি খাতকে স্বীকৃতি দেয়নি। আমলাতান্ত্রিক টানাপোড়েন থামাতে না পারলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।’

Discussion about this post