শেয়ার বিজ ডেস্ক : নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছেন হিন্দুত্ববাদী কর্মী কাজল হিন্দুস্তানি। মুসলিমদের উদ্দেশে তিনি ‘আব্দুল’, ‘জম্বি’ ও ‘হিন্দুদের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে তাদের হিন্দু পুরাণের দানবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। খবর: মাকতুব মিডিয়া ডটকম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কাজল শিংগালা (যিনি কাজল হিন্দুস্তানি নামেও পরিচিত) মুসলিমদের ‘আব্দুল’ ও ‘জম্বি’ বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন, ‘এই জম্বির সঙ্গে লড়তে হলে একসঙ্গে লড়তে হবে।’ তিনি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়ে হিন্দুদের মধ্যে ভীতি ও বিদ্বেষ সঞ্চার করার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, ‘মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে, তাহলে হিন্দুরা কোথায় যাবে?’ ভারতের হিন্দুদের জন্য ‘চত্রপতি শিবাজীর মতাদর্শে হিন্দু রাষ্ট্র’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
কাজল হিন্দুস্তানি দাবি করেন, ভারতে হিন্দুদের তৈরি করা বাংলো মুসলিমরা দখল করে নেবে। মুসলিম পুরুষদের ‘বহু সন্তান উৎপাদন করে সৈন্য তৈরি করার’ অভিযোগ এনে তাদের আগ্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করেন তিনি।
তিনি মুসলিম অভিনেতা সালমান খান ও সাইফ আলি খানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও আক্রমণ করে বলেন, তারা হিন্দু নারীদের ‘ফাঁদে ফেলছে’ এবং ‘ধর্মান্তরিত করার ষড়যন্ত্র’ করছে। কাজল দাবি করেন, মুসলিম পুরুষরা তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ও ভারতের ভেতর থেকেও অর্থ সহায়তা পায় হিন্দু নারীদের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করতে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও শিখ সংগঠনগুলোর একটি জোট, যার মধ্যে কেয়ার (CAIR) নর্থ ক্যারোলিনা, ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিল, দ্য শিখ কোয়ালিশন ও মুসলিমস ফর সোশ্যাল জাস্টিস ছিল। কাজল হিন্দুস্তানির যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিলের দাবি জানায়।
এই সমালোচনার জবাবে কাজল বলেন, ‘এটি সবার আমেরিকা, ‘মুল্লো’কি বাপের আমেরিকা নয়।’ এখানে ‘মুল্লো’ শব্দটি মুসলিমদের অপমান ও পেছানো দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত মুখ হিসেবে কাজল হিন্দুস্তানি পরিচিত। তিনি প্রায়ই মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য, বয়কটের ডাক এবং সংখ্যালঘুদের সামাজিকভাবে বর্জনের আহ্বান দিয়ে থাকেন। ২০২৩ সালের এপ্রিলে গুজরাটে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়া হেট ল্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মুসলিম ও খ্রিষ্টানবিদ্বেষী বক্তব্য প্রদানকারী হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মধ্যে কাজল শীর্ষে ছিলেন। তার ৩৫টি বক্তৃতার মধ্যে ৯টিতেই সরাসরি সহিংসতার উসকানি ছিল।
হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী কাজল হিন্দুস্তানির টুইটার প্রোফাইলে তিনি নিজেকে উদ্যোক্তা, গবেষক, বিতার্কিক, সমাজকর্মী ও ‘গর্বিত ভারতীয়’ হিসেবে পরিচয় দেন। তার অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি, যাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, তার ঘৃণামূলক বক্তব্যে নিউইয়র্কের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত বহু মানুষ হাততালি দিয়ে সাড়া দেন, যা প্রবাসী ভারতীয় সমাজের একাংশের মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাবের বৃদ্ধিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে।
এর আগে কাজলের অংশগ্রহণের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ক্ষোভের মুখে নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস শেষ মুহূর্তে কুইন্সের এক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি বাতিল করেছিলেন।

Discussion about this post