শেয়ার বিজ ডেস্ক : জ্বালানি তেল পরিবহনে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনে পরীক্ষামূলক তেল পরিবহন সফল হয়েছে। এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে চলতি মাসেই। সেনাবাহিনীর সহায়তায় প্রায় তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাইপলাইনটি এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, এটি হবে দেশের অভ্যন্তরে স্থলভাগে চালু হওয়া প্রথম তেল পরিবহন পাইপলাইন। এর আগে অবশ্য ভারত থেকে বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নামে একটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বছরে ওই পাইপলাইন দিয়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করে বাংলাদেশ। এছাড়া সমুদ্র থেকে অপরিশোধিত তেল খালাসের জন্য পৃথক আরও একটি পাইপলাইন নির্মাণ করছে বিপিসি।
বিপিসি বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি তেল পরিবহন হয় চট্টগ্রাম-গোদনাইল পথে। মূলত চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত অয়েল ট্যাংকারে করে তেল আনা হয়। এই পথে একটি অয়েল ট্যাংকার আসতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়।
কিন্তু পাইপলাইনে তেল আনা হলে মাত্র ৪ ঘণ্টায় তেল পৌঁছে যাবে। এছাড়া পাইপলাইনে তেল আনা হলে সিস্টেম লস থাকবে না। অয়েল ট্যাংকারে দুই দফা তেল লোড আনলোডের কারণে সিস্টেম লস হয়। এছাড়া নদীর মাটি-পানির সঙ্গে তেল মিশে পরিবেশ দূষণ হয়। কিন্তু পাইপলাইনে তেল পরিবহন করা হলে এই দূষণ হবে না।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় অয়েল ট্যাংকারে তেল পরিবহনে এখন প্রতি বছর বিপিসির ব্যয় হয় ৩২৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাইপলাইন চালু হলে ব্যয় হবে ৯০ কোটি টাকা। এতে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা বিপিসির সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় জ্বালানি তেল পরিবহনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাইপলাইনে পরিবহন করা হলে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। পাইপলাইনটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ২৪১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত এবং ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফতুল্লা ডিপো পর্যন্ত ডিজেল পৌঁছাবে। পথে রয়েছে ২২টি নদী ও খাল, যার নিচ দিয়ে এই পাইপলাইন পাতা হয়েছে। পুরো সিস্টেমে মোট ৯টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পটিতে আধুনিক স্কাডা (কম্পিউটারাইজড) সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ পাইপলাইনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। কোথাও সমস্যা সৃষ্টি হলে পাইপলাইনটি অটোমেটিক সিগন্যাল দেবে। এতে পাইপলাইন থেকে তেল চুরি করা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
বছরে অন্তত ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন। এর মধ্যে ১০ লাখ টন ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা করা হয়। বাকি তেলের পুরোটাই অয়েল ট্যাংকারে করে পরিবহন করা হয়।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান সম্প্র্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, এই পাইপলাইন চালু হলে আমাদের লোকসান প্রায় শূন্যে নেমে আসবে। সেনাবাহিনী চলতি মাসেই আমাদের কাছে এটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিসির এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসেই আমরা কাজ বুঝে পাব। পরীক্ষামূলক সব কাজই ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয় ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত হয়ে বেড়ে ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায়। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। সেনাবাহিনী ২৪ ব্রিগেড পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করায় এখন নারায়ণগঞ্জ (গোদনাইল ডিপো) থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত জেট ফুয়েল পরিবহনে পাইপলাইন নির্মাণের কাজও তাদের দেয়া হবে বিপিসির সূত্রে জানা গেছে। বিপিসি অর্থায়নে গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ২৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার। ফতুল্লা থেকে গোদনাইল ডিপো পর্যন্ত সাড়ে আট কিলোমিটার।

Discussion about this post