শেয়ার বিজ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলে নদীতীরবর্তী জনপদ পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় পানি প্রবেশ করায় নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। পানিতে অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টার পর বরিশাল নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডসহ অনেক এলাকা কীর্তনখোলার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলার নদীতীরবর্তী এলাকায় তলিয়ে যাওয়ায় ওই এলাকাগুলোয় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। নগরীর ভাটিখানা, পলাশপুর ও সাগরদি ধান গবেষণা রোড এলাকায় অনেক বসতবাড়িতে প্রায় হাঁটুসমান পানি।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী তাইজুল ইসলাম বিকাল ৫টায় জানান, মেঘনা, তেঁতুলিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিকাল ৩টার পর থেকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নগরীঘেঁষা কীর্তনখোলা পানি বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে ভাটা শুরু হলে নগরীর বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যাবে।
পর্যটনকেন্দ কুয়াকাটার প্রতিনিধি জানান, সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। উপকূলজুড়ে প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে। জোয়ারে সাগরতীরবর্তী এলাকা তলিয়ে গেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মিলন হাওলাদার বলেন, গতকাল বিকাল ৩টায় সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয়েছে। এটি দিনের সর্বোচ্চ গতিবেগ। বিকাল ৩টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা শেখ সেলিম রেজা জানান, নদীতে পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। তবে কোনো ধরনের লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। স্পিডবোট চলাচল গতকাল সকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় শুরু হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। সেইসঙ্গে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় নিঝুম দ্বীপসহ হাতিয়ার বিস্তীর্ণ নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানিতে অনেক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো পরিবার। বিশেষ করে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে বসবাসরত হরিণসহ বন্য প্রাণীগুলোর জন্য সৃষ্ট হয়েছে হুমকি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর থেকে জোয়ারের পানি দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। এতে ভেসে গেছে মাছের ঘের। অনেক এলাকায় পানি ঢুকে ঘরের ভেতর ঢুকেছে। কিছু পরিবার উঁচু স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় জননিরাপত্তার স্বার্থে হাতিয়া-চট্টগ্রাম ও হাতিয়া-নোয়াখালী নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, জোয়ারের ফলে নিঝুমদ্বীপের সব পুকুর, দিঘি ভেসে গেছে। প্রধান সড়কসহ সব সড়ক তলিয়ে গেছে। জোয়ার একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হচ্ছে। মানুষের বসতঘর, কৃষিজমিও তলিয়ে গেছে।
আফ্রিদি হাসান নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রতিবছর জোয়ারে ভেসে যায় ঘরবাড়ি, দোকান, গবাদিপশু ও ফসলি জমি। সাত লাখ মানুষের এই দ্বীপে নেই স্থায়ী বেড়িবাঁধ, আছে শুধু নিঃসঙ্গতা আর অবহেলা। কেউ কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে, কিন্তু আমরা আর ত্রাণ চাই না। আমরা চাই স্থায়ী সমাধান। আমাদের দাবিÑনদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ ও নিরাপদ জীবন। এটা করুণা নয়, আমাদের অধিকার।
হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলাউদ্দিন বলেন, নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে নৌযোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে আবার চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নিঝুমদ্বীপসহ অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আমরা খোঁজ রাখছি। আরও কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Discussion about this post