নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রাবণের শেষভাগে এসেও বৃষ্টি থামছে না। একটানা বর্ষণের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাকসবজি উৎপাদনে ধস নামায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে ডিম, পেঁয়াজ, মুরগি, আদা, তেল, ডাল, মাছ ও সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া ও যাত্রাবাড়ী এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়, করলা ১০০-১২০ টাকায়, পটোল ৬০-৭০ টাকায়, ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকায় এবং ঝিঙা ও চিচিঙ্গা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে। টমেটো ১৪০, দেশি শসা ১০০ ও লালশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটানা বৃষ্টির কারণে গ্রামীণ হাটবাজার থেকে সবজির সরবরাহ কমে গেছে, ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ কঠিন হচ্ছে, আর পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা দামের ফারাকও অনেক বেশি হয়ে গেছে।
বর্ষার প্রভাবে সবজি ও মসলার বাজারে আগুন। সরবরাহ কমে যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিভিন্ন বাজারে বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটোল ৬০-৭০ টাকা, করলা ১০০-১২০ টাকা এবং ঢ্যাঁড়শ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে পেঁয়াজের বাজারে। এক সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৭৫-৮৫ টাকায় পৌঁছেছে। মসলার মধ্যে আমদানি করা আদা ১৮০ থেকে ২৮০ টাকা এবং রসুন ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমি পেঁয়াজের মজুত কমে যাওয়া এবং আমদানিনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এদিকে ডিম, মাংস ও মাছের দামও বেড়েছে। প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত ডিমের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির বাজারেও দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০-৩৭০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে ইলিশ মাছের দাম কিছুটা কমেছে, যা ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ১০০ টাকায় এবং ৭০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশসহ অন্যান্য মাছের দামও স্থিতিশীল বা কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্য, যেমন তেল ও ডালের দামও বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭২ টাকা এবং মাঝারি মানের মসুর ডাল ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দার দাম এক সপ্তাহে ৫০-৫৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন ক্রেতা বলেন, ‘প্রতিদিনই বাজারে এসে নতুন দামের ধাক্কা খাচ্ছি। সবকিছুর দাম দিন দিন বাড়ছে।’
বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরবরাহ চেইন সচল রাখা, পরিবহন খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট রোধে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ময়দা (খোলা), সয়াবিন তেল (লুজ), পাম অয়েল লুজ, সুপার পাম অয়েল লুজ, মসুর ডাল (মাঝারি, ছোট), মুরগি ব্রয়লার পেঁয়াজ (দেশি), রসুন (আম), আদা (আম), এলাচ ও ডিমের দাম বেড়েছে। আর আলু, রসুন (দেশি) ও এমএস রডের (৬০, ৪০ গ্রেড) দাম কিছুটা কমেছে।

Discussion about this post