নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। এদিকে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে। এ নিয়ে টানা চার কার্যদিবস পুঁজিবাজারে পতন ঘটেছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৮ দশমিক ৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩১৫ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৫২ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে লেনদেনে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৭টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২২২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ৬০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ২১৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬৫টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১২৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ২৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৪৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল আটটি ফান্ড ও কোম্পানির দর। জেড ক্যাটাগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৫২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একই সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশিরভাগ ফান্ডের ইউনিটের দর কমেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে মাত্র ছয়টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে ১৬টি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৩টি ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ২০ কোটি ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার ১৬২টি শেয়ার ও ইউনিট দুই লাখ ২ হাজার ৬৭১ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৬৬৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬১০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, গতকালের পুঁজিবাজারে মূল্যসূচকের পতন এবং বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমে যাওয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি করেছে। আগামী দিনগুলোতে বাজারের গতিবিধি কেমন থাকে, তা দেখার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বিনিয়োগকারীদের গুজবে কান না দিয়ে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। আগামী কার্যদিবসে বাজারের গতিবিধি কী হয়, তা জানতে অপেক্ষাও করতে বলছেন তারা।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ নিয়ে নতুন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। চার দিন পুঁজিবাজারে দর পতনে এই গুজবের বড় ভূমিকা রয়েছে। বাজারে গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে, মার্জিন ঋণের নতুন নীতিমালা হয়েছে। সেখানে একটি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফার (ইপিএস) পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) বিবেচনায় নিয়ে ঋণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
মার্জিন ঋণসংক্রান্ত গুজব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, বাড়াচ্ছে উদ্বেগ। তাতে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, তারা মার্জিন ঋণের নতুন নীতিমালা তৈরি করেনি। আর ইপিএস ও এনএভির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্জিন ঋণের হার নির্ধারণ করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

Discussion about this post