নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে অর্থ লুট করা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও এভাবে ব্যাংক খাতের অর্থ লুট করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় বা আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে আরও দ্রুত এগোতে পারলে ভালো হতো।’
সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মতে অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি সন্তোষজনক। আর্থিক খাতের বিশাল বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব ছিল। এমনিতেই আমাদের আর্থিক সক্ষমতা কম। তার মধ্যে এগুলো। সে জন্য আমি খাদের কিনারায় বলি, আইসিইউতে ছিল বলি। সেখান থেকে আমরা একটু ঘুরে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতে লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আমি জানতে চাইলাম, সে বলছে স্যার ৯৫ শতাংশই খেলাপি। কে নিয়েছে টাকা? চেয়ারম্যান সাহেব, আর তার লোকজন। চিন্তা করতে পারেন? পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। সেটা কিন্তু আপনার-আমার টাকা।’
অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছেÑউল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। খারাপ বললে তো খারাপই হয়ে যাব। গ্রোথ হচ্ছে না, কর্মংস্থান হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না, এভাবে বললে তো হবে না। গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তো নেগেটিভ না। আনুমানিক একটা তথ্য গ্রোথ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আমরা আশা করছি বছর শেষে ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘হয়তো আপনারা যেভাবে প্রত্যাশা করেন, সেভাবে হয়নি। তবে অনেক কিছুই হয়েছে। আর একটু দ্রুতগতিতে হলে হয়তো ভালো হতো। আমরা আশা করছি, সামনে অর্থনীতি আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে।’
কতটি ব্যাংক মার্জ (একীভূত) করা হবে এবং কবে নাগাদ করা হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটা নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে। কতটা ব্যাংক হবে, তা আমি বলতে চাই না। তবে হবে।
যদি ব্যাংকের একীভূতকরণ নির্বাচিত সরকারের অধীনে চলে যায় এবং তারা যদি না করে, সে বিষয়ে আপনার কিছু বলার আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এখনও পুরোপুরি উল্টে গেলে তো কিছু করার নেই।
আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাচারের টাকা ফেরত আনার দৃশ্যমান কিছু দেখাতে পারবেন কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দৃশ্যমান হয়তো আশা। আমরা ১২টা দেশের সঙ্গে একই সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চেষ্টা করছি। টাকা পাচার যারা করে তাদের সক্ষমতা আমার, আপনার চেয়ে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির যে অর্থ ফিলিপিন্সে চলে গেছে তা ফেরত আনতে জান বের হয়ে যাচ্ছে।’
সংস্কার নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যেটা ইনিশিয়েট করেছি সেটা এগিয়ে নিতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা আছে। সেটা কাটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটাকে চলমান রাখতে হবে। বেসরকারি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন তো সারাবিশ্বেই অনিশ্চয়তা চলছে, শুধু বাংলাদেশে নয়। ২-৩ মাস আগে ব্যবসায়ীরা হইচই করতেন। এখনও অনেকেই করছেন। কিন্তু এখন সেটা কমেছে। আমরা ডলার রেটটা একটা জায়াগায় ধরে রাখতে পেরেছি। রিজার্ভ বাড়ছে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আর হচ্ছে না। তবে বেসরকারি খাতের কিছুটা আস্থাহীনতা রয়েছে। আমরা সেটাকে ওভারকাম করার চেষ্টা করছি।’

Discussion about this post