শেয়ার বিজ ডেস্ক : কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও সাবেক মার্কিন ট্রেজারি কর্মকর্তা এডওয়ার্ড ফিশম্যান বলেন, পৃথিবীতে অনেক প্রতিষ্ঠানই পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার হুমকি লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেউ কি প্রকৃত অর্থেই সংযুক্ত আরব আমিরাত বা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে চান। খবর: আল জাজিরা।
চীনের বড় ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যত থমকে যেতে পারে। মার্কিন কোম্পানিগুলো চীনা কারখানাগুলোকে অর্থ দিতে পারবে না, নিজেদের রপ্তানির অর্থও পাবে না। ইলেকট্রনিকস থেকে শুরু করে ওষুধ—সবকিছুর সরবরাহব্যবস্থা আটকে গিয়ে দাম বাড়িয়ে দেবে। সেজন্যই অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, চীনের বড় ব্যাংকগুলোকে কার্যত স্পর্শ করা সম্ভব নয়।
২০ বছর আগে ‘অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল’ মূলত ছোটখাটো নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গকারীদের সামলাত। যেমন কিউবান সিগার পাচারের মতো অপরাধের জন্য গড়ে কয়েক হাজার ডলার জরিমানা দিত, যা সরকারি নথির বিশ্লেষণ বলছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সাধারণ হাতিয়ার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি একেবারে পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রীয় অস্ত্রে পরিণত হয়।
২০০০ সালের দশকের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির মূল হাতিয়ার হয়ে ওঠে নিষেধাজ্ঞা। ২০০২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জরিমানার অঙ্ক ৪০০ গুণ বেড়ে যায়। বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্যাংক শত শত কোটি ডলার জরিমানার মুখে পড়ে, যেমন ২০১৪ সালে ফরাসি ব্যাংক বিএনপি প্যারিবাসকে ৯০০ কোটি ডলার দিতে হয়।
কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে বড় অঙ্কের জরিমানা কমে গেছে। অর্থ পাচারের অভিযোগে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে প্রায় ১০০ কোটি ডলার জরিমানা করা হয়। ভয়ে ব্যাংকগুলো অর্থপ্রবাহ নজরদারিতে বিপুল অঙ্ক বিনিয়োগ করে। তবে এর ফলে অনেক সময় পুরো দেশকেও ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন কয়েকটি আঞ্চলিক চীনা ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক প্রভাবের দিক থেকে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ নয়। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মারিয়া স্নেগোভায়ার মতে, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার মতো তেমন একটা কার্যকর হাতিয়ার তাদের হাতে নেই।
পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে অন্য দেশকে শাস্তি দেয়ার প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষমতা। নিষেধাজ্ঞা ও ডলারের প্রবেশাধিকার বন্ধের মাধ্যমে কঠোর চাপ সৃষ্টি করলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে রাজি নয়। ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে ছয় হাজারের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও তাতে তেমন কার্যকর ফল আসছে না।
২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছয় হাজারের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব কার্যকর করতে হলে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোকে সব লেনদেন খতিয়ে দেখতে হয়, অবৈধ কার্যকলাপ ঠেকাতে হয়। ব্যর্থ হলে তারা নিজেরাই মার্কিন জরিমানা কিংবা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে।
নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণ বলছে, ২০১৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের জন্য সবচেয়ে বড় যে ১০টি জরিমানা আরোপ করা হয়েছে, তার আটটিই ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ছয় হাজার প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই ব্যক্তি ও ছোট শেল কোম্পানি; রাশিয়ার বাইরে অবস্থিত বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টির কম, এর মধ্যে কেবল পাঁচটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া পশ্চিমা দুনিয়া থেকে বিচ্যুত হয়ে ভারত ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। সে কারণেই রাশিয়াকে সহযোগিতা করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রও জটিলতার মুখে পড়েছে।

Discussion about this post