নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) খাতে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সরকার নগদকে বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আইসিএমএবি ও মাস্টারকার্ডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫ ’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল বুধবার গভর্নর এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা এমএফএস খাতের কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে চাই। তাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা নগদকে বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং বিনিয়োগকারী আনব।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আমরা সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেব।’
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, ‘এমএফএস নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের হাতে এখনও কেবল একটি বড় প্রতিষ্ঠানই আছে। এই খাতে আরও কার্যক্রম, প্রতিযোগিতা ও নতুন বিনিয়োগ তৈরি করতে হবে। সে জন্য নগদকে বেসরকারি খাতে দেয়ার এবং বিনিয়োগ আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
গভর্নর আরও বলেন, বর্তমানে ডাক বিভাগের অধীনে পরিচালিত নগদকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে। কারণ ডাক বিভাগের এখন এটি চালানোর সক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে নগদে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে। আগের মালিকদের কারণে ইওসি-সংক্রান্ত নানা অনিয়মের যে সমস্যাগুলো ছিল, তা সমাধান করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ভুয়া কিংবা অকার্যকর হিসাব বাদ দেয়া হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের পথে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নগদের প্রধান শেয়ারহোল্ডার হিসেবে একটি প্রযুক্তি কোম্পানিকে আনা জরুরি।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা নগদকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারব, যেন এটি এমএফএস খাতে যোগ্য প্রতিযোগী হয়ে উঠতে পারে। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে নগদ। পরে এই এমএফএস কোম্পানিকে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সও দেয়া হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এ কোম্পানিকে নিয়ম ভেঙে অনৈতিক সুবিধা দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২১ অগাস্ট নগদের আগের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে উচ্চ আদালত পরে তা অবৈধ ঘোষণা করেন। তখন নগদের দায়িত্ব নেয় ডাক অধিদপ্তর।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে নগদের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যেখানে কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুকসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় বলা হয়, গত বছরের ২১ থেকে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের কার্যক্রম পরিদর্শন করে। তাতে বিভিন্ন ব্যাংকের ‘ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট’ হিসেবে ইস্যুকৃত ই-মানির বিপরীতে রিয়েল মানির ১০১ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পাওয়া যায়।
‘নগদ’ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৬৪৫ কোটি টাকার ই-মানি ঘাটতিসহ আরও কিছু গুরুতর আর্থিক অনিয়মের তথ্য প্রশাসক দলের নজরে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলাটি দায়ের করে।

Discussion about this post