নিজস্ব প্রতিবেদক : লেনদেন খরা কাটিয়ে উঠেছে দেশের পুঁজিবাজার। কয়েক কার্যদিবস ধরে ধারাবাহিকভাবে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে লেনদেনের গতি তত বাড়ছে। এতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের একের পর এক রেকর্ড হচ্ছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। গতকাল আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেনও অনেকটাই বেড়েছে। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৬৩৬ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক শূন্য দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২২৯ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকাল লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৪০০টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২৪৮টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১২৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ২৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২২২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭২টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল চারটি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮২টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ছয়টি ফান্ড ও কোম্পানির দর। ‘জেড’ ক্যাটেগরির ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ১৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও বেশির ভাগ ফান্ডের ইউনিটের দরও বেড়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে ৩৫টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে, বিপরীতে একটি ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিলনা কোনো ফান্ডের ইউনিট দর।
ডিএসইতে গতকাল মোট ৪৬ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯০টি শেয়ার এবং ইউনিট তিন লাখ ৪৬ হাজার ৪২ বার হাতবদল হয়েছে। এর জেরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
এর মাধ্যমে গত বছরের ১১ আগস্টের পর ডিএসইতে সব চেয়ে বেশি লেনদেন হলো। গত বছরের ১১ আগস্ট ২ হাজার ১০ কোটি ৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এই লেনদেন বাড়াতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে রবির শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৭ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। ৩৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো আইসক্রিম, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ই-জেনারেশন ও কেডিএস এক্সেসরিজ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরে ধীরে উন্নতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করছে। বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকলে বাজার আরও চাঙ্গা হতে পারে। গতকাল পুঁজিবাজারের এই তেজিভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোয় বাজারের এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূচক বাড়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেনেরও পরিমাণ বেড়েছে। এটি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোয়ও এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা বজায় থাকবে।

Discussion about this post