নিজস্ব প্রতিবেদক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। দেশের রাজনীতির প্রভাবশালী দল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের পেছনে ফেলে জয়লাভ করেন জুলাই আন্দোলনের সোচ্চার শিক্ষার্থী জিতু।
ভিপি পদে নির্বাচিত জিতু পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্র শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পেয়েছেন এক হাজার ২৩৮ ভোট। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) (পুরুষ) পদে নির্বাচিত শিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান পেয়েছেন ২ হাজার ৩৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্রার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান পেয়েছেন ২ হাজার ১৪ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) (নারী) পদে নির্বাচিত শিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা পেয়েছেন ৩ হাজার ৪০২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের মালিহা নামলাহ পেয়েছেন এক হাজার ৮৩৬ ভোট।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। নির্বাচনে জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।
জানা গেছে, ভিপি নির্বাচিত হওয়া আব্দুর রশিদ জিতু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
আরও জানা গেছে, জিতু জুলাই আন্দোলনের প্রথম থেকে সোচ্চার ছিলেন। এমনকি গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের স্বার্থে যৌক্তিক সব আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি। মূলত জুলাই আন্দোলন থেকে তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে জাবি ক্যাম্পাসে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে জিতু ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আন্দোলনের সময় সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হন। পরবর্তী সময়ে আরিফ সোহেল আটক হলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ‘ফার্স্ট ম্যান’ হিসেবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন পরিচালনা করেন। পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন তিনি।
জাকসু নির্বাচনের প্রচারণার সময় জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জিতু জানান, জুলাইয়ের প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। বিবেকবোধ থেকে দেশের স্বার্থে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিদ্রোহ করে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সামনের সারিতে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তার পাশে তখনও ছিল এবং এখনও আছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে জাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ওইদিন ভোট গণনা শুরু হয় রাত সোয়া ১০টায়। তবে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা করায় ফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় নেয় নির্বাচন কমিশন।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত বহুল প্রতীক্ষিত জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফল ঘোষণার আগেই কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে ছাত্রদলসহ চারটি প্যানেল ও স্বতন্ত্র পাঁচ প্রার্থী। এছাড়া নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন একজন নির্বাচন কমিশনারসহ বিএনপিপন্থি চার শিক্ষক।
জাকসুতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৮৯৭। এর মধ্যে ছাত্র ছয় হাজার ১১৫ এবং ছাত্রী পাঁচ হাজার ৭২৮ জন। এর প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।

Discussion about this post