অশোক দত্ত : গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল কারখানাগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাপানের রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড ও যুক্তরাষ্ট্রের ইকোমিলি নামের দুটি প্রতিষ্ঠান এই উদ্যোগে মূল ভূমিকা রাখছে। প্রাথমিকভাবে জাপানের রিভাইভাল প্রতিষ্ঠানটি ২৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকোমিলি নামের প্রতিষ্ঠানটিও এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দুই প্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ২ কোটি ইউএস ডলার বিনিয়োগের জন্য একটি লিখিত প্রস্তাবও জমা দিয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বুয়েট ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্ক আরও ১০ কোটি ইউএস ডলার ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বন্ধ কারখানাগুলো চালাতে ইতোমধ্যে এই যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে সরকার সম্মত হয়েছে। এখন অপেক্ষা ত্রিপক্ষীয় চুক্তির, যেখানে অংশ নেবে রিভাইভাল, জনতা ব্যাংক ও বেক্সিমকো।
জানা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের নীতিগত সম্মতি ছাড়া এগোতে পারছে না। রিভাইভালের আগ্রহের বিপরীতে বেক্সিমকো গ্রুপ ইতোমধ্যেই মন্ত্রণালয়ে একটি লেটার অব কমফোর্ট বা নিশ্চয়তাপত্র জমা দিয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের জন্য বেক্সিমকোকে ইতোমধ্যেই ৫৮৫ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হয়েছে। তবে সেই অর্থ ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত। এদিকে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হওয়ার পথে।
এ প্রসঙ্গে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়া সাবেক শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাওয়া, কারখানাগুলোর নতুন মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং তাদের প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলার টার্নওভার এই তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে এবং দেশের অর্থনীতির ধারা সচল রাখতে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, বেক্সিমকোর মূল্যবান যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো দীর্ঘদিন অচল থাকায় নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে এবং বেকার হয়ে যাওয়া শ্রমিকরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।
তিনি আশা করেন, কারখানাগুলো পুনরায় চালু হলে বেকার হয়ে যাওয়া অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে বেক্সিমকো।
জানা যায়, বেক্সিমকো টেক্সটাইলস ডিভিশন ১৫টি কারখানা নিয়ে গঠিত। এই কারখানাগুলো থেকে তৈরি পোশাক বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের পোশাক সরবরাহ করতো। স্প্যানিশ জায়ান্ট জারা, ব্রিটিশ মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ও আমেরিকান ইগল, এছাড়া পুল অ্যান্ড বিয়ার ও বেস্ট সেলারসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকোর পণ্যের চাহিদা রয়েছে।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকেই কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে এখনও অর্ডারের চাহিদা থাকায় কারখানাগুলো পুনরায় চালুর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক বিনিয়োগ ও ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার পর ধীরে ধীরে পূর্ণ উৎপাদনে ফিরতে পারবে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল কারখানাগুলো। এতে শুধু বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফেরানোই নয়, বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানও নিশ্চিত হবে।

Discussion about this post