রেমিট্যান্সের প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বাড়ার প্রভাবে বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টে (বিওপি) উন্নতি ঘটেছে। বিওপির যে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে, তাতে বাণিজ্য ঘাটতি বেশ কমেছে। এতে অর্থনৈতিক সংকটেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই মাসে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতির স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই মাসে ছিল ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমেছে ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা শতকরা হিসাবে ২১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
লেনদেন ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) তিনটি উপাদান হলো চলতি হিসাব (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট), মূলধন হিসাব (ক্যাপিটাল অ্যাকাউন্ট) ও আর্থিক হিসাব (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট)। দেশের ডলার প্রবাহ ও বৈদেশিক বাণিজ্য পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় বিওপিতে।
আমদানি-রপ্তানির ব্যবধানের কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমছে, এটি স্বস্তির কিন্তু আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। আমদানি বিল মেটাতে ডলারের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এটি কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়, সে উপায় খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চলতি হিসাবের সূচক ইতিবাচক ধারায় ফেরানো অত্যন্ত জরুরি। বাণিজ্য ঘাটতি নিরসনে দরকার অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। সরকারকে অর্থনীতির গতিশীলতা ফেরাতে জোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অর্থনীতিতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে সব খাতেই কমবেশি টানাপোড়েন চলছে। জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিও আছে চাপে। বিগত সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমেছে। এখনো বিনিয়োগ পরিবেশ সহায়ক না হওয়ায় বিনিয়োগ বাড়ছে না। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। কিন্তু আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি ব্যয়ের বড় ব্যবধানে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। বিওপির ঘাটতি মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে পূরণ করা হয়। দেশের অর্থনীতিকে পুরোপুরি গতিশীল করে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক করা দরকার।
শিল্প খাতের বিকাশ ঘটাতে হলে অবশ্যই আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি বাড়লে রপ্তানিও বাড়াতে হবে। এমনকি আমদানির বিকল্প শিল্পপণ্যের উৎপাদনও যে খুব বেশি বাড়ছে তা বলা যাবে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। নেপাল ও থাইল্যান্ডে ঘাটতি বেশি হলেও ওইসব দেশ রেমিট্যান্স ও পর্যটন খাত দিয়ে তা মিটিয়ে ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশ আগে রেমিট্যান্স দিয়ে ঘাটতি মেটাতে পেরেছে।
এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে প্রায় সময়ই। অনেক বাধা-বিপত্তির কারণে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য হোঁচট খাচ্ছে। তেমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

Discussion about this post