মীর মনিরুজ্জামান : সময় বয়ে যায়। পরিবর্তনের স্রোতে অনেক কিছুই ভেসে যায়, অনেক কিছুই মিলিয়ে যায়। কিন্তু কিছু স্বপ্ন থাকে, কিছু মিশন থেকে যায়-যা সময়ের পরীক্ষায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ঠিক সে রকমই একটি অধ্যায়ের নাম শেয়ার বিজ।
১০ বছর আগে পুরোনো শেয়ার বিজ পত্রিকার ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন এক শেয়ার বিজের যাত্রা শুরু হয়। তখন আমাদের সামনে ছিল অসংখ্য প্রশ্ন-অনিশ্চয়তা আর কিছু স্বপ্ন। আমরা জানতাম না এই রাস্তা কতটা কঠিন হবে, কত প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। তবুও বিশ্বাস ছিল, দেশের অর্থনীতির গল্পকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরার সংকল্পই এই যাত্রার প্রাণশক্তি।
আজ ১০ বছর পর আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি শেয়ার বিজ শুধু একটি পত্রিকা নয়, এটি এক প্রজন্মের সাংবাদিকতার আত্মপ্রতিজ্ঞা। একটি নির্ভরযোগ্য কণ্ঠস্বর, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগের ভাষা হয়ে উঠেছে।
আমরা এখন নতুন এক যাত্রায় পা রাখতে যাচ্ছি। বিজ্ঞাপনহীন এক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র সংবাদপত্রের রূপে। যুগের পর যুগ সংবাদপত্র বেঁচে থেকেছে বিজ্ঞাপনের টাকায়, কিন্তু নানা কারণে এখন বিজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা স্ববিরোধী ও সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে। এ কারণে আগামী তিন বছরের মধ্যে শেয়ার বিজ বিজ্ঞাপন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব পরিকল্পনায় চলবে। এটি অনেক চ্যালেঞ্জিং হলেও সঠিক সাংবাদিকতার স্বার্থে এ বন্ধুর পথে হাঁটতে চাই আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, গণমাধ্যমের প্রকৃত শক্তি টাকায় নয়, বিশ্বাসে। দ্য গার্ডিয়ান-এর মতো, আমরাও বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে তুলতে চাই এমন এক মিডিয়া মডেল, যেখানে পাঠকরাই হবে আমাদের শক্তি, আমাদের প্রেরণা, আমাদের দায়বদ্ধতা।
এই রূপান্তর কেবল সম্পাদনা নীতির নয়, এটি এক মানসিক বিপ্লব। এতে আছে সাংবাদিকতার স্বাধীনতার ঘোষণা, নৈতিকতার পুনরুত্থান। আমরা বিশ্বাস করি, সত্যের শক্তি কখনও বিজ্ঞাপনের চেয়ে ছোট নয়, কখনও বাজারের চাপে নত হয় না।
আজকের বাংলাদেশ এক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের পথে। ক্ষমতার পালাবদল, মালিকানা জটিলতা, বাজারের অস্থিরতা-সব মিলিয়ে প্রতিদিনের লড়াই যেন অবিরাম। এই ঝড়ের সময়েও শেয়ার বিজ তার নিজস্ব মর্যাদা ধরে রেখেছে। কারণ এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, এটি সাংবাদিকদের সম্মিলিত বিশ্বাসের ফসল। এখানে প্রতিটি সংবাদকর্মীর হƒদয়ে বেজে ওঠে একটাই সুর-‘সত্য বলাই আমাদের শক্তি।’
যে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা বারবার কঠিন পরীক্ষায় পড়ে, সেখানে শেয়ার বিজ হয়ে উঠেছে দৃঢ়তার প্রতীক, এক নীরব প্রতিরোধ; যা বলে ভালো সাংবাদিকতা এখনও সম্ভব, যদি ইচ্ছা থাকে, যদি আস্থা থাকে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্র শিল্প আজ এক অভূতপূর্ব পরিবর্তনের পথে। দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট-সবাই পাঠকনির্ভর মিডিয়ায় রূপ নিচ্ছে। তারা জানে, ভবিষ্যৎ টিকে আছে কাগজে নয়, আস্থায়।
শেয়ার বিজ এই বৈশ্বিক আন্দোলনেরই অংশ। আমরা বিশ্বাস করি, একটি দেশ যতটা শক্তিশালী হয় তার অর্থনীতিতে, ততটাই হয় তার সাংবাদিকতার সততায়। আমাদের লক্ষ্য, সাংবাদিকতার আদর্শকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া, যেখানে সংবাদ মানেই দায়িত্ব, বিশ্লেষণ মানেই উন্নয়ন আর পাঠক মানেই সহযাত্রী।
এই পথচলার প্রতিটি ধাপে আমাদের সঙ্গে ছিলেন অনন্য সব মানুষ-আমাদের সংবাদ কর্মী, ছাপাখানার কর্মী, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী। তাদের জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা। আপনাদের ভালোবাসা ছাড়া এই ১০ বছরের গল্প অসম্পূর্ণ থাকত। আপনারা আমাদের শিখিয়েছেন-সত্য লেখার সাহস, ন্যায় বলার দৃঢ়তা আর মানুষের গল্প ছড়িয়ে দেওয়ার নৈতিকতা। আজ আমরা যখন একটি নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ করছি, তখন তাদের প্রত্যেককেই জানাই অফুরন্ত কৃতজ্ঞতা। আমাদের সামনে এখন এক দীর্ঘপথ কিন্তু এটি আলোকিত, আশায় ভরা। আমরা দেখতে চাই একটি বাংলাদেশ, যেখানে অর্থনীতি আর সমাজ সমানতালে এগিয়ে যায়, যেখানে সাংবাদিকতা হয় সত্যের অভিভাবক, স্বাধীনতার রক্ষক। শেয়ার বিজ আগামী দিনে সেই আলোর দিশারী হয়ে থাকতে চায়-বাংলাদেশের সাংবাদিকতার নতুন উৎকর্ষের প্রতীক হিসেবে, পাঠকের বিশ্বাসের ঘরে এক অবিচ্ছেদ্য নাম হয়ে। ১০ বছরের এই আলোকযাত্রা আমাদের শুধু গর্বিতই করেনি, আরও দায়িত্ববান করেছে। কারণ এই যাত্রা শেষ নয়-এটি কেবল এক নতুন প্রভাতের শুরু।
প্রিন্ট করুন











Discussion about this post