Print Date & Time : 23 October 2025 Thursday 2:57 pm

আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: আলু চাষে পরিচিত উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার মাটি আলু চাষে উপযুক্ত হওয়ায় প্রতি বছর অধিক লাভের আশায় দুই ধাপে আলু চাষ করে স্থানীয় কৃষক। আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রথম ধাপের আলু চাষ শুরু হয় এ এলাকায়। আগাম জাতের ধান কাটার পর ওই জমিতে আলু চাষ করা হয় আগাম জাতের। পরে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে করা হয় দ্বিতীয় দফা আলু চাষ। 

গত বছর বোরো ধান ও চলতি বছর আমন ধানের বাজার কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। তাই ঠাকুরগাঁও জেলায় চলতি বছরের আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লাভের আশায় দ্বিতীয় দফায় আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে এ অঞ্চলের কৃষক।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। আলু আবাদ হয়েছে ২৫ হাজার ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। রানীসংকৈল উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। পীরগঞ্জ উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে তিন হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। হরিপুর উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে।

ঠাকুরগাঁওয়ে এবার মাটির প্রকারভেদে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও দেশি আলু। এ অঞ্চলের মাটি বেশ উঁচু ও উর্বর, তাই সব উপজেলা আলু চাষের উপযোগী। বিশেষ করে সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়ন, আখানগর ইউনিয়ন ও রুহিয়া ইউনিয়ন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমান ইউনিয়নের আলুচাষি মো. মোস্তফা আলী জানান, আট একর জমিতে আলু চাষ করছি। গত বছর বোরো ধান ও চলতি বছর আমন ধানের বাজারদর কম হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। তাই আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বেশি লাভের আশায় আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছি। এ জমিতে আমার প্রায় এক লাখ ষাট হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের এক একর জমির আলু বিক্রি করেছি ৬০ হাজার টাকায়।

চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের আলুচাষি মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, এ বছর আমি ছয় বিঘা জমিতে আলু চাষ করছি। আলু গাছ অনেক বড় হয়েছে, এজন্য সেচ দিতে হবে। কিন্তু বাজারে এখন আলুর দাম ভালো রয়েছে, তাতে কৃষক খুশি ও লাভবান। কিন্তু পরবর্তীকালে আলুর বাজারদর কেমন থাকবে তা নিয়ে আমি চিন্তিত। আখানগর ইউনিয়নের আলুচাষি মো. মানিক হোসেন জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষক ধান-গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন করে। কিন্তু সেই ফসল বাজারেই উঠলেই দামে ধস নামে। বছরের পর বছর ধরে ধানে ও গমে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে কৃষক আরও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আর লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে আমাদের আবার ফসল ফলাতে হচ্ছে। প্রতি বছর কৃষকের অনুপস্থিতে আমন ধান ক্রয় লটারির নামে একপ্রকার তামাসা শুরু হয়ে গেছে। এতে কিছু কৃষক উপকৃত হলেও বিরাট অংশ বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষকদের অনেকে আবার দালালের খপ্পরে পড়ে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

তিনি জানান, আগামীতে আর বেশি পরিমাণে ধান-গম চাষ কমিয়ে চাষ করব আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ ও বিভিন্ন শাকসবজি। ধান যতটুকু খাব ততটুকু আবাদ করব, কারণ ধান ও গম আবাদ এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রতি কেজি ধান ১৫-১৬ টাকা, সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি আলু ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করা যায়। অথচ আলুর ফলন হয় ধানের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আফতাব হোসেন বলেন, স্বল্প সময়ে আলুর চাষ একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়া আলু হিমাগারে রেখে সারা বছর খাওয়া যায় ও বিক্রি করা যায়। আশা করি বাজারদর অনুকূলে থাকলে আলু চাষ করে এ অঞ্চলের কৃষক লাভবান হবে।