বাংলাদেশি যুবকের আকুতি

ইউক্রেন থেকে আমাদের বের করুন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দামামা বাজছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বাঁধবে না এই আশায় ইউক্রেনে থেকে গিয়েছিলেন যেসব বাংলাদেশি, তারা এখন পড়েছেন বড় বিপদে। গতকাল রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করে দেয়ার পর দেশে স্বজনরা ফিরে আসার পরামর্শ দিলেও, কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় পাচ্ছেন না তারা।

ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই যে, প্রবাসীরা সাহায্যের জন্য সেখানে যেতে পারবেন। পাশের দেশ পোল্যান্ডের দূতাবাস থেকে অবশ্য যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সেখান (পোল্যান্ড দূতাবাস) থেকে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে দেশে ফিরব? কথাগুলো বলেন আটকে পড়া বাংলাদেশি রুমন। ইউক্রেনে খুব বেশি বাংলাদেশি নেই। হাজার খানেক হতে পারে বলে ধারণা দেন দুই মাস আগে শিক্ষার্থী ভিসায় দেশটিতে যাওয়া সিলেটের রুমন।

ইউক্রেনে রুশ সেনা অভিযান শুরুর পর গতকাল সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে রুমন বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে পরিবার থেকে তাকে বারবার ফোন করে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। আমি তাদের বলেছি, এখানে সব ঠিক আছে। যাতে তারা আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন, স্বজনদের শান্ত রাখতে এ কথা বললেও রুমন নিজেই দেখছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। রুমন থাকেন ইউক্রেনের মারিওপোল শহরে। আজভ সাগরের তীরবর্তী এই শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত। ইউক্রেনের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে দুটি অঞ্চল দখল করে আছে দোনেৎস্ক তার একটি, অন্যটি লুহানস্ক। রাশিয়া সীমান্তবর্তী এই দুই অঞ্চলে ট্যাংক নিয়ে রুশ সৈন্যরা ঢুকে পড়লেও মারিয়াপোল গতকালও ইউক্রেন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন চালাতে পারে বলে জোর আলোচনা চলছিল। গত কয়েক দিনের পরিস্থিতি বলছিল, যে কোনো সময় রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চলাবে।

মারিওপোলের অবস্থা বর্ণনা করে এই বাংলাদেশি বলেন, ‘শহরের ভেতর ট্যাক্সি, বাস এখনও চলছে, তবে সংখ্যা কমে গেছে। অন্য শহরে যাওয়ার সব যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষজনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। প্রচুর মানুষ নানাভাবে শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন। রাস্তায় ইউক্রেনের সেনাদের চেক পোস্ট আমি দেখেছি। সম্ভবত শহরে যেন বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে না পড়ে, তাই এই ব্যবস্থা। কারণ এই শহরে রুশপন্থিরাই বেশি। তবে চেকপোস্টের সেনারা এমনিতে কাউকে কিছু বলছে না বা বাধা দিচ্ছে না।’

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, জীবন বাঁচাতে অনেকে খাবার মজুদ করছেন। আপনিও এমন কিছু করেছেন কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সুপারশপে খাবার আছে। লোকজন একটু বেশি কেনাকাটা করছেন। এটিএমে টাকা ফুরিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে রিফান্ড করা হচ্ছে।’

ইউক্রেনে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকলেও অনারারি কনস্যুলেটর রয়েছেন। যুদ্ধপরিস্থিতি সৃষ্টির পর পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানান রুমন।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা ম্যাডাম (সুলতানা লায়লা হোসেন) আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। গতকালও জুমে আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। সেখান থেকে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে দেশে ফিরব? আমার সঙ্গে বাংলাদেশের আরও কয়েকজন স্টুডেন্ট আছে। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন ছাড়ার চেষ্টা চালিয়েও বিফল হয়েছেন রুমন।

বাংলাদেশি এই যুবক বলেন, ‘আমি যেভাবে হোক একটি নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে চাই। আপনাদের মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি, তিনি যেন আমাদের নিরাপত্তার একটা ব্যবস্থা করেন।’

৯ বছর ধরে ইউক্রেনে বসবাসরত গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার মাহবুব পারভেজ বলেন, ‘পোল্যান্ডে বাংলাদেশের দূতাবাসের হিসাবে ইউক্রেনে দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সেখানে বাংলাদেশির সংখ্যা এর চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি।’

তিনি জানান, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক সময় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা অনিবন্ধিত অভিবাসীদের কিছু সহায়তা দিয়ে থাকে। ইউক্রেনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কর্মতৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়।