Print Date & Time : 1 October 2025 Wednesday 1:05 am

উপবৃত্তি বিতরণে অনিয়ম রোধে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া কাম্য

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রাথমিক থেকে স্নাতক—সব স্তরের উপবৃত্তি বিতরণে বিগত সরকারের সময় দায়িত্ব পালন করে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। এককভাবে এ সুযোগ পাওয়া নগদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা রকমের অভিযোগ। অনেক জেলায় শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। পিন যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়া হয়েছে। সিকিউরিটি দুর্বলতা ও কোম্পানির এজেন্টদের সংশ্লিষ্টতার কারণে উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছানোর আগেই তুলে নিয়েছে সুযোগসন্ধানীরা। এমন হাজারো অভিযোগ রয়েছে নগদের বিরুদ্ধে।
উপবৃত্তির টাকা বিতরণে এত অনিয়ম, ব্যর্থতা আর জালিয়াতির অভিযোগের পরও আবারও নগদকেই উপবৃত্তির টাকা বিতরণের সুযোগ দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে নগদকে উপবৃত্তির টাকা বিতরণের এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের বক্তব্য, অনিয়ম করার পর কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি, উল্টো এককভাবে নগদকে আবারও সুযোগ দেয়ার বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত।

প্রতিবেদনে নগদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগও উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যশোরের শার্শায় বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা তাদের হাতে আসার আগেই তা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকচক্র। রাজশাহীর পবা উপজেলার বেড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চর নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এসব স্কুলের ৩৫ থেকে ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র।

শুধু যশোর বা রাজশাহী নয়, সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর একই অবস্থা। শুধু যে শিশু শিক্ষার্থীদের নগদ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তা নয়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, এমনকি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও নগদের এজেন্ট পরিচয়ে হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপবৃত্তির টাকার অনিয়মের সঙ্গে নগদের এজেন্টরা সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। উপকারভোগীদের বক্তব্য, তাদের পছন্দের অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়ে নগদের মাধ্যমে উপবৃত্তি নিতে আবার নতুন করে অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা পোহাতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি বিগত সরকারের মদতে উপকারভোগীদের পছন্দের অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে এককভাবে নগদকে উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওই নির্দেশনার পর ২০২৪ সালের ১০ জুন পর্যন্ত তিনবার সময় বাড়ানোর পরও সব শিক্ষার্থীর অ্যাকাউন্ট ‘নগদ’-এ রূপান্তর করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ সম্পন্ন করতে ২৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দের অ্যাকাউন্টেই উপবৃত্তি দেয়া হয়।

বিগত সরকারের প্রভাব খাটিয়ে ভাতা, প্রণোদনা ও উপবৃত্তি বিতরণে একচ্ছত্র আধিপত্য পেয়েছিল নগদ। নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নগদেই ভাতা বিতরণ চলছে। প্রাথমিক স্তরের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব এককভাবেই নগদকে দেয় বিগত সরকার। সামাজিক সুরক্ষা খাতের ভাতার সিংহভাগ ৭৫ শতাংশ নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। গত বছর নগদের এই ব্যর্থতার পরও ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে আবারও এককভাবে ২০২৫ সালের উপবৃত্তি বিতরণে একই পথে হাঁটছে সরকার। এতে বিগত সরকারের মদতপুষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই উপবৃত্তি বিতরণ করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই দ্রুত এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের পছন্দের অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।