Print Date & Time : 25 October 2025 Saturday 12:01 pm

গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ

সমাজে মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের পেশার উদ্ভব হয়েছে। ঠিক তেমনিই যারা আমাদের গৃহস্থালি কাজে সাহায্য করে তাদের আমরা গৃহকর্মী বলি। গ্রামে চাকরি ও আয়ের সুযোগ সীমিত থাকার ফলে গৃহকর্মীরা গ্রাম থেকে শহরে আসেন। দারিদ্র্যতার কারণে অনেক পরিবারের সদস্যকে জীবনযাত্রার খরচ বহন করতে গৃহকর্মীর কাজে নিযুক্ত হতে হয়। এছাড়া এসব পরিবারের শিশুদের শিক্ষাসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। এমনকি দেখা যায়, তাদের অনেকই অল্প বয়সেই গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হতে। অনেক ক্ষেত্রে এসব গৃহকর্মীদের নায্য বেতনটুকু দেয়া দূরে থাক বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অত্যাচার ও যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়।

সম্প্রতি রাজজধানীর একটি এলাকায় গৃহকর্ত্রী দিনাত জাহান আদরের বাসায় ১০ হাজার টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ১৩ বছর বয়সি কিশোরী কল্পনা গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার মা (গৃহকর্মী) অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে দেয়া হতো না। কল্পনাকে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতন করতেন গৃহকর্ত্রী দিনাত। কল্পনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাতে-পায়ে গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে। এছাড়া চুল সোজা করার যন্ত্র দিয়ে কল্পনার হাতের চামড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কল্পনাকে ভাটারা থানার পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে এবং গৃহকর্ত্রী দিনাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গৃহকর্মীদের ওপর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। গৃহকর্ত্রীরা তদের গৃহকর্মীদের কেনা দাস মনে করে ইচ্ছামতো অত্যাচার করেন, যেমনটা প্রাচীন যুগে দাসদের সঙ্গে করা হতো। অথচ গৃহকর্মীরাও শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাওয়ার অধিকারী। এছাড়া আমরা গৃহকর্মীদের কাজের বেডি, ঝি, বুয়া ইত্যাদি বলে সম্বোধন করি যা তাদের প্রাপ্য নয়, তারাও উত্তম আচরণের অধিকারী।

সমাজে গৃহকর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ রয়েছে। এই আইনের ৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ কার্যক্রম বিষয়ে যেমন: মজুরি নির্ধারণ, গৃহকর্মীর বয়স, গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তি, কর্মঘণ্টা, প্রসূতিকালীন সুবিধা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা, ধর্ম পালনের সুযোগ প্রভৃতি। গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে- (১) নিয়োগের ধরন (২) নিয়োগের তারিখ (৩) মজুরি (৪) বিশ্রামের সময় ও ছুটি (৫) কাজের ধরন (৬) গৃহকর্মীর থাকা খাওয়া (৭) গৃহকর্মীর পোশাক-পরিচ্ছদ ও শারীরিক পরিচ্ছন্নতা।

এছাড়া ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, অভিযোগ জানানো কোনো গৃহকর্মী তার নিয়োগকারী কর্তৃক নীতি ভঙ্গ বা অন্য কোনোভাবে নির্যাতন বা বঞ্চনার শিকার হলে ওই বিষয়ে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মনিটরিং সেল বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা মানবাধিকার ও শ্রমিক সংগঠনে টেলিফোন বা মোবাইল ফোন বা লোক মারফত বা চিঠির মাধ্যমে বা দরখাস্ত বা আবেদনের মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে হাজির হয়ে, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন। এ নীতির আওতায় সরকার কর্তৃক মনিটরিং সেল ব্যতীত অন্যত্র প্রাপ্ত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মনিটরিং সেল কর্তৃপক্ষকে যথা শিগগিরই অবহিত করতে হবে। এই আইনের প্রচার, প্রসার ও প্রয়োগের মাধ্যমে গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছি।